মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের আভাস, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে বেশ কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে (K-12) আসতে পারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই পরিবর্তনগুলোর মূল কারণ হলো ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু নীতি ও সিদ্ধান্ত।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) কার্যক্রম থেকে সরে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
এর পাশাপাশি, রূপান্তরকামীদের (transgender) প্রতি সমর্থন কমানো, গবেষণা খাতে অর্থ হ্রাস এবং অভিবাসী ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর কড়াকড়ি আরোপের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন নীতিতেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপগুলোর কারণে শিক্ষাখাতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘স্টেইনহার্ড স্কুল অফ কালচার, এডুকেশন, অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট’-এর অধ্যাপক ক্রিস ডিফিলিপিস বলেন, “নতুন কিছু নীতি এবং নির্বাহী আদেশ জারি হলেও, স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এর অর্থ কী, সে বিষয়ে এখনো অনেক অস্পষ্টতা রয়েছে।”
ডিইআই বিষয়ক নীতিতে পরিবর্তন:
ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম প্রধান একটি পদক্ষেপ হলো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিইআই বিষয়ক নীতি থেকে সরে আসতে চাপ দেওয়া।
এই নীতির মূল লক্ষ্য হলো, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈচিত্র্য, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করা।
তবে, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন তাদের ডিইআই প্রোগ্রামগুলোর নাম পরিবর্তন করছে অথবা একেবারে বন্ধ করে দিচ্ছে।
রূপান্তরকামীদের প্রতি সমর্থন হ্রাস:
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে, রূপান্তরকামী শিক্ষার্থীদের জন্য যে সমর্থন ও সুযোগ-সুবিধা ছিল, তা ধীরে ধীরে কমানো হচ্ছে।
এই সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে সরকার ‘লিঙ্গ’ (gender) শব্দটির পরিবর্তে ‘যৌনতা’ (sex) ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে এবং মানুষের শরীরকে জন্মগতভাবে নারী বা পুরুষ হিসেবে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
এর ফলে, অনেক রূপান্তরকামী শিক্ষার্থী নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্থ হ্রাস:
K-12 স্কুলগুলোর তুলনায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফেডারেল তহবিলের উপর বেশি নির্ভরশীল।
ট্রাম্প প্রশাসন গবেষণা খাতে অর্থ হ্রাস করার পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল আটকে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে (Columbia University) ২২০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২,৪০০ কোটি টাকা, প্রতি ডলার = ১১০ টাকা ধরে) জরিমানা দিতে হয়েছে।
এছাড়া, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (Harvard University) প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২,০০০ কোটি টাকা) তহবিল আটকে দেওয়া হয়েছে।
K-12 স্কুলগুলোর তহবিল:
K-12 স্কুলগুলোর জন্য ফেডারেল তহবিলের মুক্তিও বিলম্বিত হয়েছে, যার ফলে অনেক জেলার বাজেট কাটছাঁট করতে হয়েছে।
বিদেশি শিক্ষার্থী ও অভিবাসীদের উপর প্রভাব:
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কড়াকড়ির কারণে বিদেশি শিক্ষার্থী ও অভিবাসী পরিবারগুলো উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।
অনেক অভিবাসী পরিবার তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে।
এছাড়া, বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতের জন্য প্রভাব:
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে।
শিক্ষার্থীদের জন্য ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে, কারণ তারা সরকারের কাছ থেকে কেমন সহায়তা পাবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নয়।
অন্যান্য পরিবর্তন:
বর্তমান সময়ে, শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তি, যেমন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (AI) ব্যবহার বাড়ছে।
অনেক স্কুলে ক্লাসরুমে সেল ফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া, অর্থনৈতিক মন্দা এবং মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্কুলগুলোর বাজেট কমে যেতে পারে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এই পরিবর্তনগুলো শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত সকলের উপর প্রভাব ফেলবে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা