ঐতিহাসিক একটি জাহাজ, যা এক সময় বিশ্ব ভ্রমণ করেছে, অবশেষে তার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে—ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপে, যেখানে এটি এখন একটি বিলাসবহুল হোটেলে পরিণত হয়েছে।
জাহাজটির মালিক একজন সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী, যিনি এটিকে পুনরুদ্ধার করতে কয়েক বছর ধরে প্রায় ১৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন।
টাইটানিকের যুগে নির্মিত, এসএস মেডিনা নামের এই বাষ্পচালিত জাহাজটি ১৯১৪ সালে পানিতে ভাসে।
এরপর এটির জীবন বহুবার মোড় নিয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
পরবর্তীতে এটি যাত্রী পরিবহনের কাজে লাগে, এবং একসময় একটি মিশনারি জাহাজে রূপান্তরিত হয়, যা বিভিন্ন দেশে শিক্ষা ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিত।
একসময় ফিলিপাইনে সন্ত্রাসী হামলার শিকারও হয়েছিল জাহাজটি।
বর্তমানে, জাহাজটি ‘ডাউলস ফোস’ নামে পরিচিত এবং এটি ইন্দোনেশিয়ার বিনতান দ্বীপে অবস্থিত।
এর বর্তমান মালিক, এরিক স, যিনি এটিকে একটি আকর্ষণীয় হোটেলে রূপান্তর করেছেন।
এই কাজটি সহজ ছিল না।
জাহাজটিকে ডাঙায় তোলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে, যা প্রকৌশলগত দিক থেকে ছিল অত্যন্ত জটিল।
এরপর জাহাজের অভ্যন্তরীন কাঠামো পরিবর্তন করে এটিকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন একটি হোটেলে পরিণত করা হয়েছে।
হোটেলটি তৈরি করতে এরিক স-কে দীর্ঘ ১৫ বছর সময় লেগেছে।
তিনি এর পেছনে প্রায় ২৩ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার বেশি) খরচ করেছেন।
হোটেলটিতে প্রায় ১০০টি কক্ষ রয়েছে, যার কিছুতে জাহাজের পুরনো জানালা এখনো বিদ্যমান।
এরিক স-এর মতে, এই প্রকল্পটি ছিল তাঁর জীবনের একটি ‘ঐশ্বরিক আহ্বান’।
তিনি জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি কেবল একটি হোটেল তৈরি করেননি, বরং ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
হোটেলের কর্মীদের তিনি ‘ক্রু’ এবং কক্ষগুলোকে ‘কেবিন’ হিসেবে উল্লেখ করেন, যা অতিথিদের সমুদ্রযাত্রার অনুভূতি এনে দেয়।
আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেয়ে এরিক স-এর কাছে এই প্রকল্পের অন্য একটি দিক গুরুত্বপূর্ণ।
হোটেলের লাভের পুরোটা তিনি খ্রিস্টান দাতব্য সংস্থায় দান করেন।
তাঁর এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার, যা বাংলাদেশের মানুষের কাছেও অনুকরণীয় হতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন