শুক্রবার মুক্তি? আলোচনায় অবৈধভাবে ফেরত পাঠানো বাবার মামলা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এক ব্যক্তির বিতর্কিত মামলা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কিলার অ্যাব্রেগো গার্সিয়া নামের ওই ব্যক্তি, যিনি মেরিল্যান্ডে বসবাস করেন এবং তিন সন্তানের জনক, তাকে সম্ভবত শুক্রবার মুক্তি দেওয়া হতে পারে। তবে তার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, আইনি জটিলতা এখনো কাটেনি।

কিছু মাস আগে, অবৈধভাবে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর পর টেনেসির কারাগারে বন্দী ছিলেন অ্যাব্রেগো গার্সিয়া। মার্চ মাসে তাকে অন্যায়ভাবে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এরপর তিনি মানব পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত হন।

আদালতে শুনানিতে, ন্যাসভিলের দুইজন ফেডারেল বিচারক সরকারি কৌঁসুলিদের অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকেTrial-এর জন্য আটক রাখার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। তবে তাদের মধ্যে একজন গত মাসে তার মুক্তির আদেশ ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই স্থগিতাদেশ শুক্রবার শেষ হতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিতর্কিত অভিবাসন নীতির কারণে এই মামলাটি নতুন মোড় নিয়েছে। এছাড়া, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগও উঠেছে। এই ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে তার নিজ দেশ এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়।

আদালতে আইনজীবীরা যুক্তি দেন যে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া সমাজের জন্য কোনো ‘বিপদ’ নন। কৌঁসুলিরা তাকে বিপজ্জনক প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন। তারা যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, তার অপরাধ এবং ব্যক্তিগত ইতিহাস তাকে আটক রাখার উপযুক্ত কারণ। তবে, ন্যাসভিলের ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক এবং তার বিচার পরিচালনাকারী ফেডারেল বিচারক, উভয়ই তাদের এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন।

বিচারক ওয়াভারলি ক্রেনশাও এক রায়ে বলেন, “সরকার অ্যাব্রেগোর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং এর সমর্থনে থাকা প্রমাণাদি, অ্যাব্রেগোর বিপদজনকতা প্রমাণ করে না।” অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার আইনজীবীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে যেন দ্রুত তাকে পুনরায় deport না করা হয়।

আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে পুনরায় deport করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিনা। বিচারক পাওলা জেনিস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, টেনিসি থেকে মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিচারক জেনিস এক রায়ে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন, অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর হেফাজতে নেওয়া যাবে না। একইসঙ্গে, মার্চ মাসের আগে অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে তার যে অবস্থা ছিল, সেটি বহাল রাখতে হবে। এর অর্থ হলো, তাকে বাল্টিমোর ফিল্ড অফিসের তত্ত্বাবধানে রাখা হবে, যা আগে ছিল। এই তত্ত্বাবধানে তিনি মেরিল্যান্ডে কাজ করতে এবং বসবাস করতে পারতেন এবং মাঝে মাঝে একজন অভিবাসন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতেন।

তবে, বিচারকের এই রায় অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে পুনরায় deport করার ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের বাধা দেয় না। বিচারক তার রায়ে উল্লেখ করেছেন, “আইসিই সুপারভিশন অর্ডারের অধীনে অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে বাল্টিমোর ফিল্ড অফিসে ফিরিয়ে আনার পর, আইন অনুযায়ী তাদের যা করার আছে, তারা করতে পারে। যতক্ষণ না এই ধরনের পদক্ষেপগুলি সংবিধান এবং প্রযোজ্য আইনের পরিপন্থী না হয়, আদালত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না।”

আদালতের নথি অনুযায়ী, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া এবং অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা “বেআইনিভাবে হাজার হাজার অভিবাসীকে পাচার করেছেন, যাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার কোনো অনুমতি ছিল না এবং যাদের মধ্যে অনেকে এমএস-১৩ সদস্য ও সহযোগী ছিলেন।” অ্যাব্রেগো গার্সিয়া এবং তার পরিবার জানিয়েছেন, তারা এল সালভাদরের গ্যাং সহিংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছিলেন এবং এমএস-১৩-এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এই সপ্তাহের শুরুতে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বাতিল করার আবেদন করেন। তার আইনজীবীরা যুক্তি দেখান, তাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এই মামলা করা হয়েছে, কারণ তিনি তার অবৈধভাবে deport করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। তারা আরও জানান, এই ধরনের আবেদন সাধারণত খুব কমই সফল হয়, তবে তাদের মতে, এই মামলার ক্ষেত্রে এটি বাতিল করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিচারক ক্রেনশাও আগামী মাসের শুরুতে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে বলেছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *