ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি? অতীত কি বর্তমানকে পথ দেখাচ্ছে?
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের আকাশে এখনো যুদ্ধের দামামা। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সামরিক অভিযান শুরুর আগে থেকেই, দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। অনেকের মতে, ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি অতীতের বিভিন্ন ঘটনার প্রতিচ্ছবি।
বিশেষ করে, কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজতে গিয়ে কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে ১৯৩৮ সালের মিউনিখ চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমে চেকোস্লোভাকিয়ার সুদেতেনল্যান্ড অঞ্চল জার্মানির কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, যা ইউরোপে যুদ্ধ এড়ানোর একটি চেষ্টা ছিল।
অনেকে মনে করেন, এই পদক্ষেপ হিটলারকে আরও শক্তিশালী করে তোলে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথ খুলে দেয়। বর্তমানে, কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে, ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে রাজি করানো হলে, তা এক ধরনের “তোষণনীতি” (Appeasement) হবে, যা রাশিয়ার আগ্রাসনকে আরও উৎসাহিত করতে পারে।
ডেমোক্রেট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথাল যেমনটা বলেছিলেন, “ট্রাম্পের ‘জাদুকরী চিন্তা’ ধীরে ধীরে মিউনিখের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে।
সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকেও মিউনিখ চুক্তির একটি প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। ওই চুক্তির ফলে নাৎসিরা চেকোস্লোভাকিয়ার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে সহজেই অঞ্চলটি দখল করতে পেরেছিল।
একইভাবে, কোনো শান্তিচুক্তিতে যদি রাশিয়াকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনেৎস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়, তবে পুতিনের সেনারা স্লোভিয়ান্সক ও ক্রামতোর্স্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখল করতে পারবে, যা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ইয়াল্টা সম্মেলনও (১৯৪৫) আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই সম্মেলনে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল এবং সোভিয়েত dictator জোসেফ স্ট্যালিনের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
অনেকের মতে, ইয়াল্টা সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে সোভিয়েত প্রভাবের অধীনে আনতে সহায়ক হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো “বড় ধরনের সমঝোতা” করার চেষ্টা করেন, তবে তাতে ইউক্রেনের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফলের মতে, আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠক “ইয়াল্টা ২.০”-তে পরিণত হতে পারে না।
এছাড়াও, ১৯৯৪ সালের বুদাপেস্ট মেমোরান্ডামের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই মেমোরান্ডামের মাধ্যমে, ইউক্রেন স্বাধীনতা অর্জনের পর তাদের ভূখণ্ডে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রগুলো ত্যাগ করতে রাজি হয়েছিল।
বিনিময়ে, রাশিয়া ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের মাধ্যমে এবং ২০২২ সালের পূর্ণমাত্রার আক্রমণের মধ্য দিয়ে রাশিয়া সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।
সাবেক ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো মনে করেন, বুদাপেস্ট মেমোরান্ডামের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছিল কার্যত অর্থহীন।
ইউক্রেন এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।
তবে অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। অন্যথায়, এই মুহূর্তটি ইউরোপের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN