হাজার হাজার টাকা খোয়ানো: যুবকদের নেশা?

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অনলাইন জুয়ার আসক্তি: উদ্বেগের কারণ?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সারা বিশ্বে অনলাইন জুয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উন্নত প্রযুক্তি এবং স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার কারণে, খেলাধুলা এবং অন্যান্য ইভেন্টের উপর বাজি ধরা এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে।

কিন্তু এর ফলে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জুয়া খেলার আসক্তিও বাড়ছে, যা একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি নতুন গবেষণা অনুসারে, ৩০ বছরের কম বয়সী পুরুষদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ অনলাইন স্পোর্টস বেটিংয়ে জড়িত। এদের মধ্যে ১০ শতাংশের জুয়া খেলার গুরুতর সমস্যা রয়েছে।

এই সংখ্যাটি সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি, যা ইঙ্গিত করে যে তরুণ প্রজন্ম এই ধরনের আসক্তির ঝুঁকিতে বেশি।

এই গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অনলাইনে বাজি ধরে, তাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কেউ কেউ জুয়া খেলার জন্য ধার করতে বাধ্য হয়, আবার কারও আর্থিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণদের মধ্যে জুয়ার আসক্তির প্রধান কারণ হলো তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্বলতা। অল্প বয়সে জুয়া খেলা শুরু করলে, পরবর্তীতে আসক্তি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

“ইথান” নামের একজন তরুণের কথাই ধরা যাক।

কলেজ জীবনে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলায় বাজি ধরা তার জন্য একটি সাধারণ বিষয় ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি একটি মারাত্মক জুয়ায় পরিণত হয়।

একসময় তিনি এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েন যে, একটি হকি খেলায় ১১,০০০ ডলার হারানোর পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এই ঘটনার পর তিনি জুয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে বাধ্য হন।

অনলাইন জুয়ার বিস্তারের পেছনে রয়েছে এর সহজলভ্যতা। স্মার্টফোন এবং বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে, এখন যে কেউ সহজেই বাজি ধরতে পারে।

এছাড়া, বিভিন্ন খেলার লিগগুলোর সাথে জুয়া কোম্পানিগুলোর অংশীদারিত্ব এবং খেলার সময় বাজি ধরার বিজ্ঞাপনগুলিও তরুণদের আকৃষ্ট করে।

আরেকজন তরুণ, “কেভিন ভো”, বন্ধুদের প্রভাবে খেলাধুলায় বাজি ধরা শুরু করেন। প্রথমে শখের বশে শুরু করলেও, দ্রুতই তিনি এতে আসক্ত হয়ে পড়েন।

এমনকি তিনি যে খেলা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, সেগুলোতেও বাজি ধরতে শুরু করেন।

জুয়া খেলার আসক্তি শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও গভীর প্রভাব ফেলে। উদ্বেগ, হতাশা এবং সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার মতো সমস্যাগুলো এর ফলস্বরূপ দেখা যায়।

জুয়া কোম্পানিগুলো তাদের প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায়।

এর মধ্যে রয়েছে, বাজি ধরার সীমা নির্ধারণ, ব্যবহারকারীদের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য জানানো এবং আসক্ত ব্যক্তিদের জন্য সহায়তা প্রোগ্রাম।

তবে, জুয়ার বিজ্ঞাপন এবং প্রচারণার ব্যাপকতা তরুণদের প্রভাবিত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জুয়া খেলার আসক্তি কমাতে হলে, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার প্রয়োজন।

এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা। অনলাইন জুয়ার বিস্তার রোধ করতে, তরুণদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত করা জরুরি।

একইসঙ্গে, এ ধরনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *