ফ্লোরিডার একটি বিতর্কিত অভিবাসন কেন্দ্র, ‘অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ’-এর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। একটি ফেডারেল বিচারকের নির্দেশে এটির কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে, যেখানে বন্দীদের চরম প্রতিকূল পরিবেশে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
পরিবেশগত উদ্বেগ এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রশ্নে এই কেন্দ্রটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার এভারগ্লেডসের দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত ‘অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ’ নির্মাণ করা হয়েছিল দ্রুততার সঙ্গে, যা বিতর্কের জন্ম দেয়। সেখানকার অভিবাসীদের খাঁচাবন্দী করে রাখা, তীব্র গরম, পোকামাকড়ের উপদ্রব এবং অপর্যাপ্ত খাবারের মতো অভিযোগের কারণে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এমনকি কংগ্রেস সদস্য এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এই কেন্দ্রের অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানান।
বিচারক ক্যাথলিন উইলিয়ামস এক অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন, যা পরিবেশবাদী গোষ্ঠী এবং ফ্লোরিডার মিক্কোসুকি ইন্ডিয়ান উপজাতির করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে দেওয়া হয়েছে। মিক্কোসুকি উপজাতি, যারা এই কেন্দ্রের কাছেই বসবাস করে, তাদের ভূমি এবং পরিবেশের উপর এই কেন্দ্রের প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিচারক উইলিয়ামস তাঁর আদেশে বলেছেন, এই প্রকল্পটি আবাসস্থল ধ্বংস এবং অঞ্চলের বিপন্ন প্রজাতিদের মৃত্যুহার বাড়াচ্ছে।
অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা হলো একটি অস্থায়ী আদেশ, যা মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত বহাল থাকে। ফ্লোরিডার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় জানিয়েছে, তাঁরা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা এই বিষয়ে হতাশ নই।
আমরা জানি যে এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা ছিল এবং আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।” তিনি আরও বলেন, “আমরা পিছপা হচ্ছি না। আমরা এই বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে সঠিক।”
ডিস্যান্টিস তাঁর রাজ্যে অভিবাসন আটক কেন্দ্র নির্মাণের ওপর জোর দিচ্ছেন। তিনি ‘ডিপোর্টেশন ডিপো’ নামে পরিচিত একটি নতুন কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা করেছেন, যেখানে ২,০০০ জন পর্যন্ত বন্দীকে রাখা যাবে।
বিচারকের আদেশে, ‘অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ’-এ অতিরিক্ত আলো স্থাপন, রাস্তা তৈরি, খনন বা কোনো নতুন ভবন নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে যে বন্দী রয়েছেন, তাঁদের ছাড়া নতুন করে কাউকে সেখানে স্থানান্তর করা যাবে না।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, কেন্দ্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আলো, বেড়া এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সরঞ্জামগুলো ৬০ দিনের মধ্যে সরিয়ে ফেলতে হবে। এটিকে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা আমেরিকানদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে।
ফ্লোরিডার অ্যাটর্নি জেনারেল জেমস উথমিয়ার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ এখনও চালু আছে এবং আমরা আমেরিকান জনগণের জন্য বন্দী, বিতাড়ন এবং পরিষেবা দেওয়ার মিশন থেকে বিরত থাকব না।”
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সহকারী সচিব ট্রিসিয়া ম্যাকলaughlin বিচারকের এই রায়কে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির পথে বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “একজন সক্রিয় বিচারকের এই রায়টি এই সত্যকে উপেক্ষা করে যে এই জমিটি ইতিমধ্যেই এক দশক ধরে তৈরি করা হয়েছে।
এটি প্রেসিডেন্টের আমেরিকান জনগণের আদেশ পূরণ করা থেকে বিরত রাখার আরেকটি প্রচেষ্টা।”
এই মামলার শুনানিতে মিক্কোসুকি উপজাতির পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ‘অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ’-এর বর্জ্য জল উপজাতির জল সরবরাহকে হুমকির মুখে ফেলছে। বিচারক উইলিয়ামস আরও উল্লেখ করেছেন, এই কেন্দ্রের কারণে রাতের আকাশে আলোর তীব্রতা বাড়ছে, যা বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থলকে প্রভাবিত করছে।
মায়ামি-ডেড কাউন্টির মেয়র ড্যানিয়েলা লেভাইন কাভা এই রায়কে স্বাধীনতা, স্থানীয় সম্প্রদায় এবং পরিবেশের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটি সেই পরিবারগুলোর বিজয়, যারা এই কেন্দ্রের কারণে অবর্ণনীয় কষ্টের শিকার হয়েছেন।”
বর্তমানে, ‘অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ’-এ প্রায় ৪০০ জন বন্দী রয়েছেন।
আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত এবং কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। বিচার বিভাগের আপিলের ফলাফলের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।
অন্যদিকে, দেশটির অন্যান্য রাজ্যও অনুরূপ ডিটেনশন সেন্টার স্থাপনের কথা বিবেচনা করছে। এর মধ্যে ইন্ডিয়ানা এবং নেব্রাস্কা উল্লেখযোগ্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন