মাত্র ১৬ বছর বয়সী তরুণী, কিন্তু এরই মধ্যে টেনিস বিশ্বে নিজের জাত চিনিয়েছেন। তিনি হলেন আমেরিকান খেলোয়াড় জুলিটা পারেজা।
আসন্ন ইউএস ওপেনে ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছেন এই উঠতি তারকা। সম্প্রতি জুনিয়র বিভাগে বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন তিনি।
সিনিয়র পর্যায়ে গ্র্যান্ড স্ল্যামে এটাই তার প্রথম অংশগ্রহণ।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোর বাসিন্দা জুলিটা। নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে সিএনএন স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তেও তিনি বেশ শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছেন।
“ছোটবেলা থেকে টিভিতে যাদের খেলা দেখে বড় হয়েছি, তাদের সঙ্গেই খেলার সুযোগ পাওয়াটা আমার কাছে দারুণ আনন্দের। বিশেষ করে ঘরের মাঠে, ইউএস ওপেনে খেললে দর্শকদের সমর্থন পাব, যা খুবই স্পেশাল হবে।”
খেলোয়াড় হিসেবে জুলিটার পরিণত মানসিকতা মুগ্ধ করার মতো। পরিবারের সমর্থন এবং কোচের সঠিক তত্ত্বাবধানে, কোনো কিছুই যেন তাকে বিচলিত করতে পারে না।
সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেও তার মধ্যে কোনো অহংকার নেই, বরং একজন ভালো খেলোয়াড় হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বছর উইম্বলডন জুনিয়র টুর্নামেন্টে মেয়েদের একক ও দ্বৈত বিভাগে ফাইনাল খেলেন জুলিটা। যদিও দুটি ফাইনাল ম্যাচেই তিনি হেরে যান, তবে র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর হওয়ার খবর তার সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয়।
“আমি একেবারেই আশা করিনি এমনটা হবে,” হাসতে হাসতে বলেছিলেন জুলিটা। “এটা আমার কঠোর পরিশ্রমের ফল। আমার টিম প্রতিদিন আমাকে ভালো খেলোয়াড় হতে সাহায্য করেছে, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”
টেনিসের জুনিয়র ইভেন্টগুলো সাধারণত এত বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করে না, তবে উইম্বলডনে জুলিটার খেলা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হয়েছিলেন। অনেকে তো তার ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
এর আগে, ২০১৯ সালে কোকো গফের পর, জুলিটাই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় যিনি কোনো ডব্লিউটিএ (WTA) টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠেছিলেন। কলম্বিয়ার কোপা কোলসানিতাস-এর সেমিফাইনালে হারের পরও, জুলিটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি যেকোনো পর্যায়ে ভালো খেলতে পারেন।
জুলিটার মা কলম্বিয়ার এবং বাবারও কলম্বিয়ান পরিবার রয়েছে, তাই কলম্বিয়ার সঙ্গে তার একটা আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে।
টেনিসের প্রতি জুলিটার ভালোবাসা তৈরি হয় পরিবারের হাত ধরে। মাত্র চার বছর বয়সে মায়ের উৎসাহে টেনিস খেলা শুরু করেন তিনি। তার দুই বোনও টেনিস খেলেন, যারা সবসময় জুলিটাকে খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন।
বর্তমানে, স্প্যানিশ কিংবদন্তি রাফায়েল নাদালকে নিজের আদর্শ মানেন জুলিটা। নাদালের কোর্টের মানসিকতা এবং তার লড়াকু মনোভাব জুলিটাকে আকৃষ্ট করে।
টেনিসের পাশাপাশি, পড়াশোনাটাও চালিয়ে যাচ্ছেন জুলিটা। স্কুলের পরিবর্তে এখন অনলাইনে ক্লাস করেন তিনি।
প্রতিদিন দু’বেলা ট্রেনিং, জিম এবং ফিটনেস নিয়ে কাজ করার পরেও, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো বা সমুদ্রের ধারে বিশ্রাম নেওয়ার মতো কাজগুলোও তিনি উপভোগ করেন।
তবে তার প্রধান লক্ষ্য একজন বিশ্বমানের পেশাদার খেলোয়াড় হওয়া, যার জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করা এবং টুর্নামেন্টগুলোতে অংশ নেওয়া।
ইউএস ওপেনে তার প্রথম প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছেন বর্তমান র্যাঙ্কিংয়ের দশ নম্বর খেলোয়াড় এলেনা রাইবাকিনা।
খেলাধুলা এবং জীবনের এই ভারসাম্য বজায় রাখাটা জুলিটার কাছে একটা বিশেষ সুযোগ। তিনি মনে করেন, “টেনিস খেলতে এবং বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করতে পারাটা আমার জন্য আনন্দের। খেলার সুযোগ পাওয়া, গ্রেট প্লেয়ারদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাওয়াটা সৌভাগ্যের বিষয়।
আমি জানি, আমার খেলার আরও অনেক দিক উন্নত করার আছে, এবং আমি প্রতিদিন ভালো হতে চাই।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন