হঠাৎ কেন টেনিস তারকার এমন সিদ্ধান্ত? ভক্তদের চোখ কপালে!

টেনিস খেলোয়াড়ের জীবন: আর্থিক চাপ আর বিকল্প আয়ের সন্ধানে। বর্তমান যুগে খেলাধুলা শুধু মাঠের লড়াই নয়, এর বাইরেও খেলোয়াড়দের টিকে থাকার জন্য লড়তে হয় অনেক কিছু।

শীর্ষ পর্যায়ের খেলোয়াড় না হলে আর্থিক চাপ সবসময় একটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সম্প্রতি, মার্কিন টেনিস খেলোয়াড় সাচিয়া ভিকেরি-র জীবনযাত্রা সেই কথাই যেন নতুন করে মনে করিয়ে দেয়।

সা‌চিয়া ভিকেরি, যিনি একসময় বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে ৭৩ নম্বরে ছিলেন, বর্তমানে র‍্যাঙ্কিংয়ের বাইরে। টেনিস ক্যারিয়ারে তিনি প্রায় ২১ কোটি টাকার বেশি (২.১ মিলিয়ন ডলার) প্রাইজমানি জিতেছেন।

তবে, তাঁর মতে, এই অর্থ যথেষ্ট নয়। কারণ, খেলোয়াড় হিসেবে টিকে থাকতে গেলে অনেক খরচ করতে হয়। উন্নত মানের প্রশিক্ষক, ফিটনেস ট্রেনিং, চিকিৎসার খরচ, এমনকী এমআরআই-এর মতো পরীক্ষার পেছনেও বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়।

আহত হওয়ার কারণে যখন তিনি খেলার বাইরে ছিলেন, তখন আর্থিক সাহায্য পেতে তিনি একটি বিকল্প পথ বেছে নেন। তিনি ‘অনলিফ্যানস’ নামক একটি ওয়েবসাইটে তাঁর ছবি ও ভিডিও আপলোড করতে শুরু করেন।

এই প্ল্যাটফর্মটি মূলত সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক, যেখানে ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট মূল্যে তাঁদের পছন্দের কনটেন্ট দেখতে পান। যদিও ‘অনলিফ্যানস’ মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পরিচিত, সাচিয়া জানিয়েছেন, তাঁর কনটেন্ট সে ধরনের নয়।

ভিকেরি জানান, এই প্ল্যাটফর্মে তাঁর ছবি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল কিছু অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করা। প্রথম তিন মাসেই তিনি প্রায় এক কোটি টাকার বেশি আয় করেছেন।

তাঁর মতে, এই পরিমাণ অর্থ গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টগুলোতে পাওয়া অর্থের চেয়েও বেশি। শুধু তাই নয়, এই প্ল্যাটফর্ম তাঁকে আর্থিক স্বাধীনতা দিয়েছে এবং তাঁর টেনিস ক্যারিয়ার চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে।

শুধু সাচিয়াই নন, অনেক অ্যাথলেটই এখন খেলাধুলার পাশাপাশি অন্য আয়ের পথ খুঁজছেন। কানাডার পোল ভল্টার অ্যালিশা নিউম্যান, মিক্সড মার্শাল আর্টস ফাইটার পেইজ ভ্যানজ্যান্ট এবং বাস্কেটবল খেলোয়াড় লিজ ক্যাম্বেজ-এর মতো তারকারাও এই প্ল্যাটফর্মে নাম লিখিয়েছেন।

তাঁদের মতে, খেলার জগৎয়ে ভালো অর্থ উপার্জন করা সবসময় সম্ভব হয় না, তাই বিকল্প আয়ের পথ তাঁদের জন্য জরুরি।

তবে, এই ধরনের প্ল্যাটফর্মে নাম লেখানোর কারণে অনেক সময় খেলোয়াড়দের সমালোচনার শিকার হতে হয়। অনেকেই মনে করেন, ‘অনলিফ্যানস’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া মানেই যৌনকর্মীর তকমা পাওয়া।

সাচিয়া এই ধারণা ভাঙতে চেয়েছেন। তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, তাঁর কনটেন্টে কোনো নগ্নতা বা যৌন আবেদন নেই।

সা‌চিয়ার মতে, শীর্ষ ১০০ জনের মধ্যে না থাকলে অনেক খেলোয়াড়ের পক্ষেই আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়া কঠিন। তাঁর প্রশ্ন, যদি খেলোয়াড়দের ‘অনলিফ্যানস’-এর মতো প্ল্যাটফর্মে যেতে না হয়, তাহলে কি টেনিস সংস্থাগুলো খেলোয়াড়দের প্রাপ্য অর্থ দেবে?

এই বিষয়ে ‘উইমেন’স টেনিস অ্যাসোসিয়েশন’ (WTA)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা শীর্ষ পর্যায়ের ইভেন্টগুলোতে খেলোয়াড়দের জন্য পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ বাড়াচ্ছে।

২০২৭ সালের মধ্যে ডব্লিউটিএ ১০০০/৫০০ ইভেন্টগুলোতে এবং ২০৩৩ সালের মধ্যে সব ইভেন্টগুলোতে সমান পুরস্কারের অর্থ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

সা‌চিয়ার এই পদক্ষেপ খেলোয়াড়দের আর্থিক নিরাপত্তা এবং খেলাধুলার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায়। তাঁর মতে, খেলাধুলার উন্নতি তখনই সম্ভব, যখন খেলোয়াড়রা আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *