হার্ভার্ডের গবেষণা: ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বিবাদে ২.৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি!

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে ২.৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ বরাদ্দ বাতিল করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার। অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা, ক্যাম্পাস তদারকি এবং বিভিন্ন আদর্শিক মতপার্থক্যের জেরে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে করে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞান গবেষণার অগ্রগতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সিএনএন সহ বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কালে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দকৃত প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ বাতিল করা হয়। এর কারণ হিসেবে অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা বিষয়ক বিতর্ক, ক্যাম্পাস ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং কিছু আদর্শিক বিষয়ে মতানৈক্যকে তুলে ধরা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকল্প, যেমন- ক্যান্সার, এএলএস (Amyotrophic Lateral Sclerosis) সহ বিভিন্ন রোগের গবেষণা এবং নতুন জৈবিক হুমকি সম্পর্কিত গবেষণা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা খাতে অর্থায়নের মূল উৎস হলো ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (National Institutes of Health – NIH) এবং ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (National Science Foundation – NSF)। এই সংস্থাগুলো বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের জন্য অনুদান দিয়ে থাকে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাতিল হওয়া অনুদানের পরিমাণ ১.৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা গবেষণার জন্য বরাদ্দ ছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত খরচ করা হয়নি। এই অর্থ বিজ্ঞানীদের গবেষণার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কাজে লাগতো।

বিষয়টি নিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেমেছে। তবে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে সরকারের সঙ্গে আপোষ করতে রাজি হয়েছে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তাদের গবেষণা খাতে প্রায় ২.৬ বিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধার করতে ২২০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে রাজি হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ কী হবে, সেদিকে তাকিয়ে আছে সবাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা তাদের অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতাকে কোনোভাবেই ছাড় দিতে রাজি নয় এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

এই ঘটনার প্রভাব শুধু হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা সহযোগীতাও এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। এছাড়াও, এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞান গবেষণার অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহা এবং ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) বিষয়ক কিছু নীতির প্রতি অসন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করেছে।

এদিকে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস (UCLA)-কেও একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে। সেখানেও প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলারের গবেষণা অনুদান বাতিল করা হয়েছে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি সরকারের সঙ্গে কোনো আপোষ রফা না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *