মুখোশ পরা এজেন্ট ও জনসম্মুখে গ্রেপ্তার: আতঙ্কে বাংলাদেশ?

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের আগ্রাসী পদক্ষেপ: মুখোশ পরিহিত এজেন্ট ও জনসম্মুখে গ্রেপ্তার নিয়ে বিতর্ক।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ (ICE) কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার কার্যক্রম বর্তমানে বেশ উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি, সংস্থাটির কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করার কিছু কৌশল বিশেষভাবে সমালোচিত হচ্ছে, যেখানে মুখোশ পরা এজেন্ট, সনাক্তকরণ চিহ্নবিহীন গাড়ি এবং জনবহুল স্থানে গ্রেপ্তার করার মতো ঘটনা দেখা যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে অভিবাসী এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

লস এঞ্জেলেসে, কলম্বিয়ার এক অভিবাসী নারী, যিনি লাইভ স্ট্রিমিং করছিলেন, তাকে প্রকাশ্য দিবালোকে তার গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে গ্রেপ্তার করে মুখোশধারী ফেডারেল এজেন্টরা। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে সান বার্নার্দিনোতে, যেখানে অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা একটি গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেয় এবং ভেতরের যাত্রীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।

এছাড়া, ওয়াশিংটন ডিসিতেও, এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সময় মুখোশ পরিহিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির দৃশ্য দেখা যায়, যা ক্যামেরাবন্দী হয়েছে এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই ধরনের গ্রেপ্তার কার্যক্রম অনেকটা অপহরণের মতো মনে হয়। অনেক সময়, সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না যে গ্রেপ্তারকারীরা আসলে কারা এবং তাদের পরিচয় কী।

এই পরিস্থিতিতে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির পাশে দাঁড়াতে গিয়ে সাধারণ নাগরিকরাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এই ধরনের কৌশল ব্যবহারের ফলে জনগণের মধ্যে ভীতি তৈরি হয় এবং তারা কর্তৃপক্ষের প্রতি আস্থা হারাতে শুরু করে।

আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের পরিচয় গোপন করার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু সমালোচকদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপে জনসাধারণের মধ্যে ভীতি আরও বাড়ে এবং পুলিশের প্রতি অবিশ্বাস জন্ম নেয়।

বিশেষ করে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে, এই ধরনের কার্যক্রম তাদের মধ্যে সবসময় একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রাখে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে এই ধরনের গ্রেপ্তারের ঘটনা বাড়ছে। ডেমোক্রেট-নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলোতে সাধারণত জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলোতে গ্রেপ্তার করা হয়, যেখানে রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলোতে গ্রেপ্তার সাধারণত কারাগার বা ডিটেনশন সেন্টারে হয়ে থাকে।

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ভিন্নতা ‘স্যানচুয়ারি পলিসি’র কারণে হয়েছে, যা অনেক ডেমোক্রেট-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিদ্যমান এবং এর ফলে স্থানীয় জেলগুলো ICE-এর সঙ্গে সহযোগিতা করতে সীমিত থাকে।

সম্প্রতি, কানেকটিকাটের নরওয়াক শহরে দুই ভাইকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। সেখানকার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মুখোশ পরা এজেন্টরা তাদের আটক করার চেষ্টা করছে।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের একজন লিওনেল চাভেজ, যিনি তার আইনজীবীর মাধ্যমে জানিয়েছেন, তার এবং তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, সে বিষয়ে তারা অন্ধকারে ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন অভিবাসন বিভাগের প্রধান জন স্যান্ডওয়েগ বলেছেন, এজেন্টদের পরিচয় গোপন করে গ্রেপ্তার করাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি মনে করেন, এর ফলে সাধারণ মানুষ ভুল বুঝতে পারে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

তবে, অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের এজেন্টরা সব সময় দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেন। তারা সন্ত্রাস, মাদক পাচার এবং মানব পাচারের মতো অপরাধ দমনের চেষ্টা করেন।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সিএনএন (CNN) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন (CNN)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *