আতঙ্কে বাজার! ট্রাম্পের ফেডারেল রিজার্ভে আঘাত, এরপর কী?

ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) একজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিয়েছেন। যদিও এই পদক্ষেপটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর তার ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ, তবে তিনি সম্ভবত ফেডের প্রধান জেরোম পাওয়েলকে অপসারণ করা থেকে বিরত থাকবেন।

কারণ এমনটা করলে বাজারের অস্থিরতা আরও বাড়বে।

ফেডারেল রিজার্ভ, যা আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে পরিচিত, এর গভর্নর লিসা কুককে সম্প্রতি বরখাস্ত করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বন্ধকী জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

কিন্তু ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য ছিলেন ফেডের বর্তমান চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই পাওয়েলের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং তাকে ‘বোকা’ বলেও মন্তব্য করেছেন। এমনকি তাকে বরখাস্ত করারও হুমকি দিয়েছিলেন।

তবে, উপদেষ্টাদের সতর্কবার্তার পর তিনি পিছু হটেন। উপদেষ্টারা তাকে জানিয়েছিলেন, পাওয়েলকে বরখাস্ত করলে বাজারের চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

এমনকি, জেপি মরগান-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেমি ডিমোন এবং গোল্ডম্যান স্যাকসের ডেভিড সলোমনের মতো শীর্ষ ব্যাংকাররাও ফেডের স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন। তাদের মতে, ফেডের প্রধানকে অপসারণ করা হলে পুরো আর্থিক বিশ্বে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।

আর্থিক বাজারের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের এই দ্বিধা নতুন নয়। এর আগে, তিনি যখন বাণিজ্য অংশীদারদের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছিলেন, তখনও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেছিলেন, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। কিন্তু বন্ড মার্কেটে দরপতনের আশঙ্কায় ট্রাম্প সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাওয়েলকে বরখাস্ত করা হলে তা হবে অনেকটা ট্রাম্পের সেই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের মতোই। যদিও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিছু আক্রমণাত্মক ও চিরাচরিতের বাইরে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে চাননি।

লিসা কুককে অপসারণের ঘটনাও বাজারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। জেপি মরগানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুককে অপসারণের ফলে অন্যান্য গভর্নরদেরও অপসারণের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

ফেডের স্বাধীনতা বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে নীতিনির্ধারকেরা রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে অর্থনৈতিক তথ্য বিবেচনা করে সুদহার নির্ধারণ করতে পারেন।

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাস্ট উলফার্স এই পদক্ষেপকে ‘প্রতিষ্ঠানের উপর আক্রমণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ধরনের সিদ্ধান্তের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতির উপর পড়তে পারে, যার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব দেখা যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন সুদের হার পরিবর্তনের ফলে বিনিময় হার, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *