মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভয়ঙ্কর পরজীবী! আক্রান্ত ব্যক্তি, বিস্তারিত দেখুন

নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম: এল সালভাডর ফেরত এক মার্কিনির দেহে পরজীবী শনাক্ত, আতঙ্কে স্বাস্থ্য দপ্তর।

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে বসবাসকারী এক ব্যক্তির শরীরে ‘নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম’ নামক এক প্রকার পরজীবী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তি সম্প্রতি এল সালভাডর ভ্রমণ করে ফিরেছিলেন। রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় উদ্বেগে স্বাস্থ্য দপ্তর।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) গত ৪ঠা আগস্ট এই রোগ শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আক্রান্ত ব্যক্তি বর্তমানে সুস্থ আছেন এবং তাঁর থেকে অন্য কোনো ব্যক্তি বা পশুর মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ হয়নি।

নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম আসলে এক ধরনের মাছি, যা শরীরের খোলা ক্ষত বা ছিদ্রপথে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে লার্ভা বের হয় এবং মাংস খেতে শুরু করে। সাধারণত, এই পরজীবী দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে দেখা যায়।

মানুষের শরীরে এর সংক্রমণ খুবই বিরল, তবে গবাদি পশুর মধ্যে এটি উদ্বেগের কারণ। কারণ, মধ্য আমেরিকা এবং মেক্সিকো হয়ে উত্তর দিকে এর বিস্তার ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সিডিসি এই পরজীবীর বিস্তার রোধে কাজ করছে।

অতীতে, এই স্ক্রুওয়ার্ম আমেরিকান গবাদি পশু শিল্পের জন্য একটি বড় সমস্যা ছিল। ফ্লোরিডা ও টেক্সাস ছিল এর প্রধান কেন্দ্র। তবে ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই পরজীবীকে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে এর আগেও কারও শরীরে এই সংক্রমণ দেখা যেতে পারে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটি প্রথম। স্ক্রুওয়ার্মের কারণে মানুষের শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, যা সহজে সারে না। ক্ষতস্থানে পোকা দেখা যেতে পারে এবং দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে।

এই পরজীবী সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জানা দরকার। নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম এক ধরনের নীল-সবুজ মাছি। এর বৈজ্ঞানিক নাম সম্ভবত “মানুষখেকো” হিসেবে অনুবাদ করা যেতে পারে। স্ত্রী মাছিরা কোনো পশু বা মানুষের ক্ষত, নাক, চোখ বা মুখের মধ্যে ডিম পাড়ে।

ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়ে মাংস খাওয়া শুরু করে। এই লার্ভাগুলো প্রায় এক ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং ক্ষততে প্রবেশ করে মাংসের গভীরে চলে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের জন্য এই পরজীবীর ঝুঁকি খুবই কম। তবে যারা সংক্রমিত অঞ্চলের পশুদের কাছাকাছি যান বা খোলা স্থানে ঘুমান, তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।

চিকিৎসকরা লার্ভা অপসারণের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করেন। আক্রান্ত স্থানে ক্ষত দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সিডিসি বলছে, কোনোভাবেই নিজে থেকে পোকা বা লার্ভা অপসারণের চেষ্টা করা উচিত নয়।

যুক্তরাষ্ট্রে এই রোগের প্রাদুর্ভাব আবার দেখা দিতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা একে সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন। অতীতে পুরুষ মাছির প্রজনন বন্ধ করে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে মানুষ ও পশুর স্থানান্তরের কারণে এটি মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোতে পুনরায় ছড়িয়ে পড়ছে।

নতুন কিছু জেনেটিক কৌশল তৈরি করা হচ্ছে, যা স্ক্রুওয়ার্মকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এটি পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসে, তবে টেক্সাস-মেক্সিকো সীমান্ত অঞ্চলে এর প্রথম প্রভাব দেখা যেতে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *