শিরোনাম: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাড়ছে মাংসখেকো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ: বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিশ্বে বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। এর মধ্যে অন্যতম একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হলো মাংসখেকো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, যা উপকূলীয় অঞ্চলে দ্রুত ছড়াচ্ছে। এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ মানুষের জীবনহানির কারণ হতে পারে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর রিপোর্টে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
এই মাংসখেকো ব্যাকটেরিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম হলো *Vibrio vulnificus*। এটি সাধারণত উষ্ণ ও লবণাক্ত পানিতে বাস করে। মানুষের শরীরে কোনো ক্ষত বা কাটার মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে মারাত্মক সংক্রমণ হতে পারে। এর ফলে নেক্রোটাইজিং ফ্যাসাইটিস নামক এক জটিল রোগ হয়, যেখানে আক্রান্ত স্থানের টিস্যু দ্রুত নষ্ট হতে শুরু করে।
সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, বমি এবং আক্রান্ত স্থানে ফোলা ও কালচে হওয়া। সময়মতো চিকিৎসা না হলে আক্রান্ত ব্যক্তির অঙ্গহানি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার বাড়ছে। এছাড়া, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উপকূলীয় এলাকার পানিতে দূষণ বাড়ে, যা ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তারের সহায়ক হয়। গলিত বরফ নদীর পানিতে মিশে লবণাক্ততা কমিয়ে ব্যাকটেরিয়ার জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকাতেও এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বাড়ছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ।
তাহলে, বাংলাদেশের মানুষের জন্য এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
বাংলাদেশ একটি উপকূলীয় দেশ এবং এখানে বিভিন্ন ধরণের জলজ খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা অনেক বেশি। তাই এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
- সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, বিশেষ করে যাদের শরীরে কোনো কাটা বা ক্ষত আছে, তাদের সমুদ্র বা নদীর পানিতে নামা উচিত না।
- সামুদ্রিক খাবার, বিশেষ করে কাঁচা বা আধা-সিদ্ধ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খাবার ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া উচিত।
- উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী বা ভ্রমণকারীদের দ্রুত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত, যদি তারা কোনো সংক্রমণের লক্ষণ অনুভব করেন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে এবং দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট এই স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ। স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগকে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
সবার মনে রাখতে হবে, সচেতনতাই পারে জীবন বাঁচাতে। কোনো রকম উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা ও সংবাদ প্রতিবেদন।