ইরানের উপর ফের নিষেধাজ্ঞা? পরমাণু চুক্তি নিয়ে উত্তেজনা!

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় বহাল হওয়ার গুরুতর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে পশ্চিমা দেশগুলো।

এই পরিস্থিতিতে ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া সক্রিয় করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি।

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে, যা জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি হয়েছিল। এর বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু সম্প্রতি ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়িয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-কে তাদের পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ দিতেও অস্বীকার করেছে। ফলে, চুক্তিটি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

‘স্ন্যাপব্যাক’ একটি বিশেষ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ২০১৫ সালের আগের জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো দ্রুত পুনরায় কার্যকর করা যায়। এই প্রক্রিয়ার অধীনে, নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ ছাড়াই নিষেধাজ্ঞাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বহাল হয়ে যায়।

এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরে বাধা ইত্যাদি।

ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিল। তারা ইরানের কাছে তিনটি শর্ত দিয়েছিল: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা পুনরায় শুরু করা, আইএইএ-কে পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া এবং ৪০০ কেজির বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের হিসাব দেওয়া।

তবে, ইরান এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসায়, তারা সরাসরি ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে পারবে না। তবে, ইউরোপীয় দেশগুলো মনে করছে, এখন ব্যবস্থা না নিলে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে এই প্রক্রিয়াটি কার্যকারিতা হারাবে।

কারণ, ওই সময়ের পর চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করতে পারে।

ইরান অবশ্য তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে আসছে। দেশটির দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি থেকে সরে আসার কারণে তারা চুক্তির শর্ত মানতে বাধ্য নয়।

তেহরান আরও বলছে, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া সক্রিয় করে, তাহলে তারা পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

বর্তমানে, ‘স্ন্যাপব্যাক’ সক্রিয় হলে কূটনৈতিক সমাধানের সামান্য সুযোগ থাকবে। আন্তর্জাতিক সংকট গ্রুপের ইরান বিষয়ক পরিচালক আলী ভায়েজের মতে, এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে কোনো সমঝোতা হলে, নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে।

তবে, যদি কোনো সমঝোতা না হয়, তাহলে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *