যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)-এর প্রধান সুসান মোনারেজকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন সংস্থাটির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তা।
বুধবার (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময়) হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মোনারেজ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এজেন্ডার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিলেন না এবং পদত্যাগ করতে রাজি না হওয়ায় তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিডিসির প্রধান হিসেবে মোনারেজের মেয়াদ ছিল এক মাসেরও কম। তার আইনজীবীরা বলছেন, বিজ্ঞানকে সমর্থন করার কারণেই মূলত তাকে টার্গেট করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (এইচএইচএস) বুধবার বিকেলে এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে মোনারেজের বিদায়ের ঘোষণা করে। জবাবে, মোনারেজের আইনজীবীরা একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানান, তিনি পদত্যাগ করেননি এবং তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এমন কথাও জানানো হয়নি।
মোনারেজের আইনজীবীরা তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, “ডাঃ সুসান মোনারেজ যখন বিজ্ঞানসম্মত নয় এমন নির্দেশগুলোতে সীলমোহর দিতে এবং নিবেদিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরখাস্ত করতে অস্বীকার করেন, তখন তিনি রাজনৈতিক এজেন্ডার পরিবর্তে জনগণের সুরক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সে কারণেই তিনি আক্রমণের শিকার হয়েছেন।”
আইনজীবীদের মতে, এটি কেবল একজন ব্যক্তির বিষয় নয়, বরং জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল করা, বিশেষজ্ঞদের কণ্ঠরোধ করা এবং বিজ্ঞানের বিপজ্জনক রাজনৈতিকীকরণের একটি অংশ।
মোনারেজের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গেই পদত্যাগ করেছেন সিডিসির অন্তত চারজন শীর্ষ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে রয়েছেন সংস্থার উপ-পরিচালক ড. ডেবরা আউরি, ন্যাশনাল সেন্টার ফর এমার্জিং অ্যান্ড জুনোটিক ইনফেকশাস ডিজিজেস-এর প্রধান ড. ড্যানিয়েল জার্নিগান, ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইমিউনাইজেশন অ্যান্ড রেসপিরেটরি ডিজিজেস-এর প্রধান ড. ডেমেট্রি ডাসকালাকিস এবং পাবলিক হেলথ ডেটা, সার্ভিল্যান্স, অ্যান্ড টেকনোলজির পরিচালক ড. জেনিফার লেডেন।
ড. আউরি এক ইমেইলে সিডিসিতে আসন্ন বাজেট কাটছাঁট, পুনর্গঠন এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে সংস্থার ওপর যে প্রভাব পড়বে, সে সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কিন্তু চলমান পরিবর্তনগুলো তাকে সংস্থার একজন নেতা হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বাধা দিচ্ছে।
তিনি বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ভ্যাকসিন সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানো এবং সিডিসির যোগাযোগের ওপর নতুন বিধিনিষেধের কথাও উল্লেখ করেন।
ড. ডাসকালাকিস তার পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন, “এমন একটি পরিবেশে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় যেখানে সিডিসিকে এমন নীতি এবং উপাদান তৈরি করার হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয় যা বৈজ্ঞানিক বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না।”
এই ঘটনাগুলো জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। পাবলিক সিটিজেনের ড. রবার্ট স্টেইনব্রুক বলেছেন, “সিডিসিকে কার্যত নেতৃত্বশূন্য করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি একটি ভয়াবহ বিপর্যয়।”
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল ওস্টারহোম বলেছেন, এই পদত্যাগগুলো আমেরিকার জন্য একটি গুরুতর ক্ষতি। তিনি যোগ করেন, “সিডিসি থেকে অভিজ্ঞ, বিশ্বমানের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের চলে যাওয়া স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের চরমপন্থী নেতৃত্বের ব্যর্থতার সরাসরি ফল।
তারা আমাদের দেশকে কম নিরাপদ করে তুলছে এবং জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার জন্য আমাদের প্রস্তুতি দুর্বল করে দিচ্ছে।”
উল্লেখ্য, সুসান মোনারেজ সিডিসির ২১তম পরিচালক ছিলেন। গত ৩১শে জুলাই তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এর এক মাসের মধ্যেই তাকে বরখাস্ত করা হলো।
এর আগে, গত ৮ই আগস্ট, সিডিসির প্রধান কার্যালয়ের কাছে এক ব্যক্তি গুলি চালায়। ওই ব্যক্তি নিজেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের কারণে বিষণ্ণ ও আত্মঘাতী মনে করছিলেন।
যদিও ওই ঘটনায় সিডিসির কেউ হতাহত হয়নি, তবে কর্মীদের মধ্যে এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হলো সিডিসি (সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন)। এটি সংক্রামক ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস