কোভিড ভ্যাকসিন: এবার কি জটিলতা বাড়ছে?

কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য টিকা গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে, এই বছর টিকা পাওয়াটা অনেকের জন্য বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।

শুধু আমেরিকাতেই নয়, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশেও টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে দেখা যাচ্ছে নানা দ্বিধা। এই প্রেক্ষাপটে, কিভাবে টিকা পাওয়া যাবে, কাদের জন্য এটি বেশি জরুরি, এবং আমাদের দেশের জন্য এর থেকে কি শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে কিছু আলোচনা করা হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) সম্প্রতি ফাইজার, মডার্না এবং নোভাভ্যাক্স-এর নতুন কোভিড-১৯ টিকার অনুমোদন দিয়েছে। তবে, এই অনুমোদন কিছু শর্তসাপেক্ষ।

এই টিকাগুলো মূলত ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়স্ক ব্যক্তি এবং স্বাস্থ্যগত জটিলতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে। যাদের হাঁপানি, ক্যান্সার, হৃদরোগ বা ফুসফুসের সমস্যা, অতিরিক্ত ওজন, বিষণ্ণতা, ধূমপানের ইতিহাস অথবা শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা রয়েছে, তাদেরও এই টিকা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে, টিকা বিষয়ক কিছু বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। যেমন, এই টিকা কাদের জন্য প্রযোজ্য, এবং তারা কিভাবে এটি গ্রহণ করতে পারবে? এছাড়াও, স্বাস্থ্য বীমা এই টিকাগুলোর খরচ বহন করবে কিনা, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানিগুলো টিকার খরচ বহন করে থাকে। তবে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বীমার ধারণা এখনো ততটা প্রচলিত নয়। এখানে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং বিভিন্ন বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে টিকা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু এখনো অনেক মানুষের শরীরে আগের সংক্রমণ অথবা টিকার মাধ্যমে তৈরি হওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে, তাই সবার জন্য এখনই টিকা নেওয়াটা জরুরি নাও হতে পারে। তবে, বয়স্ক এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য বার্ষিক টিকা নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এর কারণ হলো, সময়ের সাথে সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই, নতুন করে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে বুস্টার ডোজ নেওয়া প্রয়োজন।

টিকা বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)-এর পরামর্শক কমিটি আগে সবার জন্য বার্ষিক কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার সুপারিশ করত।

কিন্তু বর্তমানে নতুন কিছু নিয়ম আসায়, সেই সুপারিশগুলোতে পরিবর্তন আসতে পারে। এই ধরনের মতপার্থক্য এবং নতুন নতুন নির্দেশনার কারণে অনেক মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে দ্বিধা তৈরি হতে পারে।

বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি চলছে। তবে, এখানেও জনগণের মধ্যে টিকার প্রয়োজনীয়তা এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি এবং বয়স্ক নাগরিকদের টিকা নেওয়া উচিত।

সরকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের উচিত, টিকার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখতে পারি যে, টিকার প্রাপ্যতা, সরকারি নীতি, এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা—এগুলো একটি সফল টিকাদান কর্মসূচির জন্য খুবই জরুরি।

আমাদের দেশের স্বাস্থ্য বিভাগকে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে একটি কার্যকর এবং সুসংগঠিত টিকাদান ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *