জয় পাওয়েল কোথায়? নীরবতার কারণ কী?

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ: রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিবেন চেয়ারপার্সন?

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ফেডারেল রিজার্ভ (Federal Reserve) নিয়ে বর্তমানে আলোচনা চলছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা এবং এর ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, ফেডারেল রিজার্ভের বর্তমান চেয়ারম্যান জ্যাঁ পাওয়েল-এর (Jay Powell) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিষয়টি হলো, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের একজন কর্মকর্তার অপসারণের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই কর্মকর্তার নাম হলো লিসা কুক (Lisa Cook)। লিসা কুকের বিরুদ্ধে বন্ধকী ঋণ সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে, যদিও এখনো পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে, অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যা ফেডারেল রিজার্ভের স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী।

ফেডারেল রিজার্ভ সাধারণত রাজনৈতিক বিষয়গুলো এড়িয়ে চলে এবং কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখায় না। তবে, লিসা কুকের অপসারণের চেষ্টা নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভের নীরবতা অনেকের কাছেই হতাশাজনক। কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, পাওয়েলের এখনই মুখ খোলা উচিত। তাঁদের মতে, এভাবে চুপ করে থাকলে, রাজনৈতিক চাপ আরও বাড়বে এবং এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে।

অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন, পাওয়েলের এখনই কোনো মন্তব্য করা উচিত হবে না। তাদের যুক্তি হলো, বিষয়টি এখনো আদালতে বিচারাধীন এবং পাওয়েলের কোনো মন্তব্য পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে। তাছাড়াও, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পাওয়েল যদি ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি বিতর্কে জড়ান, তাহলে তা ফেডারেল রিজার্ভের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

অর্থনীতিবিদ ডেভিড উইলকক্স (David Wilcox) মনে করেন, “প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য পাওয়েলকে সরাসরি বিতর্কে জড়ানোর প্রয়োজন নেই।” আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (American Enterprise Institute) অর্থনৈতিক নীতি অধ্যয়ন পরিচালক মাইকেল স্ট্রেইন (Michael Strain) বলেন, “আমার মনে হয় না, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তর্কে জড়ালে ফেডারেল রিজার্ভের কোনো লাভ হবে।”

তবে, সাবেক ফেডারেল রিজার্ভ অর্থনীতিবিদ ক্লডিয়া সাহম (Claudia Sahm) মনে করেন, “হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়া উচিত হবে না”, কারণ তাতে জেতা সম্ভব নয়। তিনি আরও যোগ করেন, জনসাধারণের কাছে এই বিষয়টি পরিষ্কার করতে ফেডারেল রিজার্ভকে আরও সক্রিয় হতে হবে, যাতে তারা বুঝতে পারে প্রেসিডেন্টের এই ধরনের পদক্ষেপ কেন খারাপ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পাওয়েলের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। হয় তিনি নীরব থাকবেন, অথবা প্রকাশ্যে এর প্রতিবাদ জানাবেন। পাওয়েলের মেয়াদ শেষ হতে খুব বেশি দিন বাকি নেই। তাই অনেকেই মনে করেন, এখনই সময় উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার।

বাংলাদেশের অর্থনীতির দিকে তাকালে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশেও বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank) দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য।

তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *