উতাহ-র সুপ্রিম কোর্ট একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করেছে, যিনি স্মৃতিভ্রংশতায় ভুগছেন এবং ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড বেছে নিয়েছিলেন।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে, ১৯৮৬ সালে সংঘটিত একটি অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ৬৭ বছর বয়সী র্যালফ লেরয় মেনজিয়াসের মৃত্যুদণ্ড আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। মেনজিয়াস দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগ করছেন এবং তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছেন যে তিনি গুরুতর স্মৃতিভ্রংশতায় ভুগছেন, যার কারণে তিনি নিজের মৃত্যুদণ্ডের কারণ বুঝতে অক্ষম।
আদালতের শুনানিতে মেনজিয়াসের আইনজীবীরা যুক্তি দেন যে, তাঁদের মক্কেল গত ৩৭ বছর ধরে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় রয়েছেন এবং এই সময়ে তাঁর স্মৃতিভ্রংশতা মারাত্মক রূপ নিয়েছে। তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন, সবসময় তাঁর অক্সিজেন-এর সাহায্য নিতে হয় এবং তাঁর মৃত্যুদণ্ড কেন হতে চলেছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
উতাহ সুপ্রিম কোর্ট এক বিবৃতিতে জানায়, মেনজিয়াসের আইনজীবীরা পরিস্থিতি পরিবর্তনের যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পেরেছেন। তাই নিম্ন আদালতকে মেনজিয়াসের মানসিক সুস্থতা নতুন করে মূল্যায়ন করতে হবে।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে ১৯৮৬ সালে নিহত হওয়া মাউরিন হানসাকারের পরিবারের সদস্যদের দুঃখ আরও বাড়বে উল্লেখ করে আদালত জানায়, তারা আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
মেনজিয়াসের আইনজীবী লিন্ডসে লেয়ার জানিয়েছেন, সর্বশেষ মূল্যায়ন এর পর থেকে তাঁর মক্কেলের স্মৃতিভ্রংশতা আরও বেড়েছে।
মাউরিন হানসাকারের পরিবারের সদস্যরাও আদালতের এই সিদ্ধান্তে হতাশ এবং দুঃখিত। তাঁরা এই বিষয়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার আবেদন করেছেন।
আদালতের এই রায়ের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়েছিল সংবাদ সংস্থা এপি। তারা এ বিষয়ে উতাহ অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, মেনজিয়াস-ই প্রথম ব্যক্তি নন যিনি মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় স্মৃতিভ্রংশতার শিকার হয়েছেন। এর আগে, ২০১৯ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট আলাবামার বাসিন্দা ভার্নন ম্যাডিসনের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করে, যিনিও স্মৃতিভ্রংশতায় ভুগছিলেন।
আদালত জানায়, গুরুতর মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড দেওয়া নিষ্ঠুর ও অমানবিকতার শামিল। ম্যাডিসন ১৯৮৫ সালে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন এবং ২০২০ সালে কারাগারে তাঁর মৃত্যু হয়।
আদালতের মতে, কোনো আসামী যদি বুঝতে না পারেন কেন তাঁর মৃত্যুদণ্ড হচ্ছে, তবে সেই মৃত্যুদণ্ড সমাজের প্রত্যাশিত প্রতিশোধ পূরণ করতে পারে না।
মেডিকেল বিশেষজ্ঞরা মেনজিয়াসের মানসিক সুস্থতা নিয়ে পরস্পরবিরোধী মত দিয়েছেন। প্রসিকিউটরদের নিযুক্ত করা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তিনি এখনও তাঁর পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা রাখতে পারেন।
অন্যদিকে, আসামীর পক্ষের বিশেষজ্ঞরা এর বিরোধিতা করেছেন।
মাউরিন হানসাকার ১৯৮৬ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি একটি দোকান থেকে অপহৃত হন। ঘটনার দুই দিন পর, একটি পিকনিক এলাকার কাছে তাঁর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়।
উতাহ-তে সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল এক বছর আগে, যেখানে ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে আসামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল ২০১০ সালে, রনি লি গার্ডনারের ক্ষেত্রে।
এই বছর সাউথ ক্যারোলিনায় ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে দুজন আসামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন