গাজায় মানবিক সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল, বাড়ছে সংঘাত।
জেরুজালেম থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, হামাসকে দুর্বল করতে গাজায় সামরিক অভিযান জোরদার করার অংশ হিসেবে সেখানকার উত্তরাঞ্চলে মানবিক সহায়তা কমানো বা বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এপি’র প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে গাজা শহরের উপর বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এছাড়াও, উত্তর গাজায় ত্রাণবাহী গাড়ির প্রবেশও কমিয়ে দেওয়া হবে।
এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ইসরায়েল ওই অঞ্চলের কয়েক লক্ষ বাসিন্দাকে দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গত শুক্রবার, গাজা শহরকে একটি যুদ্ধক্ষেত্র ঘোষণা করে ইসরায়েল। তাদের দাবি, হামাসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই শহরে এখনো সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও গত প্রায় ২৩ মাসের যুদ্ধে শহরটিতে একাধিকবার বড় ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে।
গাজা শহরে বর্তমানে কয়েক লক্ষ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন এবং তারা তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এর মধ্যেই শহরটিতে অভিযান আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল।
সম্প্রতি, তারা শহরের বাইরেও হামলা জোরদার করেছে। শুক্রবার রাতে গাজায় বেশ কয়েকটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের দৃশ্য দেখা গেছে।
সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬০ হাজারের বেশি হয়েছে। শনিবার, গাজার কেন্দ্রে ত্রাণ নেওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহত হয়েছে।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কবে থেকে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে, গত কয়েকদিন ধরে গাজায় বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার ঘটনাও কমে গেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, সেনাবাহিনীর মুখপাত্র অ্যাভিচাই আদ্রাই শুক্রবার ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণাঞ্চলে পালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি একে ‘অনিবার্য’ বলেও উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজা শহর থেকে ব্যাপক হারে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হলে মানবিক সংকট আরও তীব্র হবে।
খাদ্য সংকট বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়েছে, গাজা শহরে দুর্ভিক্ষ চলছে এবং সেখানকার প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে। শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টির কারণে ১০ জন মারা গেছে, যাদের মধ্যে তিনজন শিশুও রয়েছে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির প্রেসিডেন্ট মিরিয়ানা স্পোলজারিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এ ধরনের স্থানান্তরের ফলে গাজা উপত্যকার কোনো এলাকাতেই বিপুল সংখ্যক মানুষের জায়গা সংকুলান হবে না।
কারণ, এখানকার অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং খাদ্য, জল, আশ্রয় ও চিকিৎসার চরম অভাব দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গাজা শহর থেকে নিরাপদে এবং সম্মানজনকভাবে ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া কার্যত অসম্ভব।
ইতিমধ্যে, গাজা শহর থেকে বাসিন্দারা তাদের সামান্য জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যেতে শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই একাধিকবার ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে ২৩ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
কিন্তু গাজা শহরের অনেক বাসিন্দাই বলছেন, তাদের যাওয়ার মতো নিরাপদ কোনো জায়গা নেই।
দক্ষিণে আশ্রয় নেওয়া আমের জায়েদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, “এখানে খাবার নেই, এমনকি পানিও পাওয়া যাচ্ছে না।
আর যদি পাওয়াও যায়, তবে তা পানের অযোগ্য।
তিনি আরও জানান, “আশ্রয়হীন মানুষের সংখ্যা বাড়লে এখানকার দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস