ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভের আগুনে ঝলসে উঠলো পার্লামেন্ট ভবন, নিহত অন্তত ৩।
ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন শহরে সম্প্রতি সরকার বিরোধী বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করেছে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে কয়েকটি শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে দক্ষিণ সুলাওয়েসি প্রদেশের মাকাসারে বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় পার্লামেন্ট ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়, যাতে অন্তত তিনজন নিহত এবং আরও পাঁচজন আহত হয়েছে।
শুক্রবার রাতে মাকাসারে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। টেলিভিশনে দেখা যায়, প্রাদেশিক পরিষদের ভবনটি আগুনে জ্বলছে এবং পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ফাদলি তাহার জানান, শনিবার সকালে উদ্ধারকর্মীরা তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। এছাড়া, ভবন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া পাঁচজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পশ্চিম জাভার বানদুং শহরেও বিক্ষোভকারীরা আঞ্চলিক পার্লামেন্ট ভবনে আগুন ধরিয়েছিল, তবে সেখানে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সুরাবায়াতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সদর দফতরে হামলা চালায়। তারা বেড়া ভেঙে এবং গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, কিন্তু বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেল ও লাঠিসোটা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় বিক্ষোভ কিছুটা শান্ত হলেও, বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চিহ্ন এখনো দৃশ্যমান। বিক্ষোভের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু গাড়ি, পুলিশ অফিস এবং বাসস্টপ।
গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভের মূল কারণ হলো আইনপ্রণেতাদের জন্য বরাদ্দকৃত অতিরিক্ত আবাসন ভাতা। জানা গেছে, প্রত্যেক সংসদ সদস্য প্রতি মাসে প্রায় ৫০ মিলিয়ন রুপিয়াহ (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ লাখ টাকার বেশি) আবাসন ভাতা পান, যা তাদের বেতনের অতিরিক্ত।
এই ভাতা গত বছর থেকে চালু হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই ভাতা অতিরিক্ত এবং এটি এমন এক সময়ে দেওয়া হচ্ছে যখন সাধারণ মানুষ জীবনযাত্রার উচ্চ মূল্য, কর বৃদ্ধি এবং বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করছে।
বিক্ষোভের তীব্রতা বাড়ে রাইড-শেয়ারিং চালক আফফান কুর্নিওয়ানের মৃত্যুর পর। বৃহস্পতিবার জাকার্তায় এক বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ির চাপায় তিনি নিহত হন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কুর্নিওয়ানকে চাপা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ন্যাশনাল পুলিশের একটি সাঁজোয়া যান দ্রুতগতিতে এসে বিক্ষোভকারীদের ওপর উঠিয়ে দেয় এবং কুর্নিওয়ানকে চাপা দেয়।
শনিবার বালিতে কুর্নিওয়ানের মৃত্যুতে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন রাইড-শেয়ারিং চালক ও শিক্ষার্থীরা। পর্যটকদের এই দ্বীপে এমন বিক্ষোভ বিরল ঘটনা। তারা পুলিশ সংস্কার এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি জানান।
বিক্ষোভকারীরা বালি অঞ্চলের পুলিশ সদর দফতরের দিকে মার্চ করলে দাঙ্গা পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিক্ষোভকারীরাও ইট-পাটকেল ও বোতল ছুঁড়ে এর জবাব দেয়।
শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরগুলো হলো মেদান, সোলো, ইয়োগিয়াকর্তা, মাগেলাং, মালং, বেঙ্গকুলু, pekanbaru এবং পাপুয়া অঞ্চলের মানোকোয়ারি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (Komnas HAM) তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুধু জাকার্তাতেই প্রায় ৯৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের হামলায় প্রায় ২৫ জন পুলিশ গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তবে কোমনাস হাম মনে করে, সাধারণ মানুষের হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্দোনেশিয়া সরকারের সমালোচনা করে বলেছে, সরকার বিক্ষোভ দমনের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্দোনেশিয়ার নির্বাহী পরিচালক উসমান হামিদ বলেন, “প্রতিবাদের অধিকার প্রয়োগের কারণে কারও জীবনহানি হওয়া উচিত নয়।
কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এবং কোনো শর্ত ছাড়াই গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস