**নাইজেরিয়ায় বোকা হারাম-এর প্রভাব: সাহায্য কমার ফলে শিক্ষাব্যবস্থা সংকটে**
উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার একটি অঞ্চলে, যেখানে এক সময় বোকা হারাম জঙ্গিদের দাপট ছিল, সেখানে এখন শিক্ষা ব্যবস্থা চরম হুমকির সম্মুখীন। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)-এর অনুদান কমে যাওয়ায় সেখানকার একটি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এর ফলে চরমপন্থীদের দ্বারা শিশুদের বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।
মেইদুগুরি শহরের ‘ফিউচার প্রাউয়েস ইসলামিক ফাউন্ডেশন স্কুল’ নামের একটি বিদ্যালয় কয়েক হাজার শিশুর আশ্রয়স্থল। বোকা হারামের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা, উদ্বাস্তু হওয়া শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করে এই স্কুলটি।
কিন্তু ইউএসএআইডি-র তহবিল কমে যাওয়ায় স্কুলটি এখন বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই ৭০০ ছাত্রছাত্রীকে এবং ২০ জন শিক্ষককে ছাঁটাই করা হয়েছে।
আট বছর আগে বোকা হারামের হামলায় নিজের গ্রাম ছেড়ে আসা ইসরায়েল পিটার নামের এক কিশোরের এখন বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তার প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসছে, কারণ তার পরিবার স্কুলের খরচ যোগাতে অক্ষম।
ইসরায়েলের মতো আরও অনেক শিশুর জীবনে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা।
বোকা হারামের উত্থান হয় ২০০৯ সালে, যারা পশ্চিমা শিক্ষা ব্যবস্থার ঘোর বিরোধী। তারা এই অঞ্চলে ইসলামিক আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
তাদের সহিংসতা ও হামলার শিকার হয়ে ইতোমধ্যে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২৬ লক্ষাধিক মানুষ।
শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া শিশুদের চরমপন্থীদের দলে ভেড়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। স্থানীয় বিশ্লেষকদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের জঙ্গি দলে ভেড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা জানান, যারা আগে বোকা হারামের সদস্য ছিল, তাদেরও অনেকে এখন স্কুলে পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তাদেরও আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
শিক্ষা মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনের পথ খুলে দেয়। নাইজেরিয়ায়, বিশেষ করে যেখানে সংঘাত চরম, সেখানে শিশুদের জন্য ভালো মানের শিক্ষা খুবই জরুরি।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, নাইজেরিয়ার বিদ্যালয়ে যাওয়া শিশুদের সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। দেশটির সরকার শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের মাত্র ৪ থেকে ৭ শতাংশ ব্যয় করে, যেখানে ইউনেস্কোর সুপারিশ হলো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ।
ফান্ডিং কমে যাওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো। উদাহরণস্বরূপ, রামাতু উসমান নামের এক কিশোরী তার পরীক্ষার ঠিক আগে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে।
তার মা জানান, মেয়ের স্কুলে ফেরার জন্য তিনি প্রতিদিন কাঁদেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার একসময় নাইজেরিয়ার সবচেয়ে বড় সাহায্যদাতা ছিল। ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে দেশটি প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে সেই সহায়তা কমে যাওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস