ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ম্যাক্রোঁ।
এই পদক্ষেপে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সমাধানে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে, যা উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তুলেছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে ইসরায়েল এবং তাদের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক চিঠিতে ম্যাক্রোঁকে অভিযুক্ত করে বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণার মাধ্যমে তিনি “জাতিগত বিদ্বেষের আগুনে” ঘি ঢালছেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে তা “উগ্রবাদীদের” উৎসাহিত করবে এবং “সহিংসতা” আরও বাড়াবে।
গাজায় মানবিক বিপর্যয় এবং চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ম্যাক্রোঁ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি মনে করেন, ফিলিস্তিনের জনগণের একটি নিজস্ব রাষ্ট্র থাকা উচিত, যা ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান চলছে, যার ফলে এ পর্যন্ত ৬৩,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ফ্রান্সের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং মাল্টাও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া, নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড এবং পর্তুগালের মতো দেশগুলোও একই ধরনের পদক্ষেপ বিবেচনা করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি প্রতীকী হলেও, এটি ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে। এর মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়বে এবং নেতানিয়াহুর সরকার যে “গণহারে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের” চেষ্টা করছে, সেই ধারণা দুর্বল হবে।
তবে, ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুহাম্মদ শেহাদা মনে করেন, এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। এটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং হামাসের সহিংস নীতির বিরুদ্ধে একটি বিকল্প তৈরি করবে।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারোত জানিয়েছেন, ফ্রান্স ও সৌদি আরবের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ আরব লীগের ২২ সদস্য হামাসের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজায় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যা ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের দখলে চলে গিয়েছিল।
যদিও ইউরোপীয় নেতারা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছেন, তবুও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা কম। তারা মনে করে, কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত এবং কার্যকরভাবে শাসন করতে অক্ষম।
আন্তর্জাতিক মহলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। তবে, গাজায় চলমান সংঘাত এবং সেখানকার মানবিক সংকট এই প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস