ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভ থামলেও, কেন এত ক্ষোভ?

ইন্দোনেশিয়ায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ, গভীর অসন্তোষ এখনো বিদ্যমান। গত কয়েক মাস ধরেই ইন্দোনেশিয়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক দুর্দশা নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছিল।

এর মধ্যে, আইনপ্রণেতাদের জন্য বিশাল অঙ্কের আবাসন ভাতার প্রস্তাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। এর প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা সহিংস রূপ নেয়।

বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং সংসদ সদস্যদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায়। বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেয়, যার ফলশ্রুতিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

বিক্ষোভের সূত্রপাত হয় মূলত আইনপ্রণেতাদের জন্য প্রস্তাবিত একটি বিশাল আবাসন ভাতার বিরুদ্ধে। প্রস্তাবিত ভাতা জাতীয় গড় সর্বনিম্ন মজুরির ১০ গুণেরও বেশি ছিল, যা সাধারণ মানুষের কাছে ছিল চরম অবিবেচনাপ্রসূত।

এই ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শ্রমিক সংগঠন ও ছাত্ররা রাস্তায় নামে। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন যে, সরকার তাদের দুর্দশার প্রতি কোনো মনোযোগ দিচ্ছে না, বরং জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের ঐশ্বর্য দেখাচ্ছেন।

পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় যখন পুলিশের একটি সাঁজোয়া যান বিক্ষোভকারীদের ওপর উঠিয়ে দিলে একজন মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর বিক্ষোভ আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

বিক্ষোভের কারণে সামাজিক মাধ্যম কোম্পানি টিকটক তাদের লাইভ ফিচার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রবোও সুবিয়ান্তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি আইনপ্রণেতাদের সুযোগ-সুবিধা কমানোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।

তবে, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে।

তাদের মতে, বিক্ষোভকারীদের ওপর দেশদ্রোহিতা বা সন্ত্রাসের অভিযোগ আনাটা সঠিক নয়।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট সুবিয়ান্তো গত বছর ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন নীতি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তার কিছু নীতি জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে।

সম্প্রতি বিক্ষোভের মূল কারণ ছিল ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়, মজুরি বৃদ্ধি না হওয়া এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমে যাওয়া। বিক্ষোভকারীরা তাদের কথা শোনা এবং নীতি পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছে।

বিক্ষোভ বর্তমানে কিছুটা স্তিমিত হলেও, জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভ এখনো বিদ্যমান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, অন্যথায় ভবিষ্যতে আবারও বিক্ষোভ দেখা দিতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *