যুদ্ধ নয়, শিল্পের জয়গান: ৩৫ মিলিয়ন পুঁতি দিয়ে যুদ্ধবিমানকে নতুন রূপে রাঙিয়ে তোলার এক অসাধারণ গল্প।
দক্ষিণ আফ্রিকার শিল্পী র্যালফ জিম্যান অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি একটি পুরনো যুদ্ধবিমান, সোভিয়েত যুগের মিগ-২১, -কে সজ্জিত করেছেন প্রায় ৩৫ মিলিয়ন পুঁতি দিয়ে।
এই কাজটি করতে তাঁর সময় লেগেছে পাঁচ বছরের বেশি। জিম্যানের এই শিল্পকর্ম শুধু একটি দৃষ্টিনন্দন সৃষ্টিই নয়, বরং এটি অস্ত্রশস্ত্রের বিস্তার এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী বার্তা বহন করে।
জিম্যান দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক দিকগুলো তুলে ধরেন। অতীতে তিনি এ.কে-৪৭ রাইফেল এবং ক্যাস্পির সাঁজোয়া যান তৈরি করেছেন, যেগুলি সবই পুঁতি দিয়ে সজ্জিত ছিল।
তাঁর নতুন এই কাজটি “ওয়েপন্স অফ মাস প্রোডাকশন” সিরিজের অংশ। এই সিরিজের প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিশ্বজুড়ে অস্ত্রের বিস্তার এবং সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
মিগ-২১ বিমানটি বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জিম্যান বলেন, ১৯৮০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকা অ্যাঙ্গোলার গৃহযুদ্ধ এবং সীমান্ত যুদ্ধে জড়িয়ে পরেছিল। সেই সময়ে কিউবা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে মিগ-২১ ব্যবহার করে, যা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বেশ ব্যয়বহুল প্রমাণিত হয়েছিল।
তাই, এই বিমানটি তাঁর শিল্পীসত্তার গভীর উপলব্ধিকে প্রকাশ করে।
এই বিশাল কাজটি সম্পন্ন করার জন্য জিম্যান ১০০ জনের বেশি দক্ষ কারিগর নিয়োগ করেছিলেন, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার আদিবাসী এনদেবে সম্প্রদায়ের মানুষ। এই সম্প্রদায়ের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী পুঁতি দিয়ে কারুশিল্প তৈরির দীর্ঘ ইতিহাস।
জিম্যানের এই উদ্যোগ একদিকে যেমন ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তেমনই কারিগরদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে কারিগরদের শিশুদের শিক্ষা এবং ইউক্রেনের শিশুদের জন্য আর্ট থেরাপির ব্যবস্থা করা হবে।
যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে এই আর্ট থেরাপি সহায়তা করবে।
জিম্যানের মতে, তাঁর এই শিল্পকর্ম বর্তমান সময়ে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। অস্ত্রশস্ত্রের বিস্তার এবং পুলিশের ক্রমবর্ধমান সামরিকীকরণ—উভয়ই এখন উদ্বেগের বিষয়।
তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে ব্যবহৃত এমআরএপি (MRAP – Mine Resistant Ambush Protected) গাড়ির ধারণাটি এসেছিল ক্যাস্পির সাঁজোয়া যান থেকে।
যুদ্ধবিমানটিকে পুঁতি দিয়ে সজ্জিত করার ধারণাটি বেশ অভিনব। জিম্যান ছোটবেলা থেকেই পুঁতির কাজ ভালোবাসতেন।
তিনি বলেন, পুঁতির কাজকে সবসময় অবমূল্যায়ন করা হয়েছে, তাই তিনি চেয়েছিলেন এটিকে একটি ” fine art ” হিসেবে তুলে ধরতে।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই শিল্পী তাঁর কাজের মাধ্যমে শুধু একটি সুন্দর শিল্পকর্ম তৈরি করেননি, বরং তিনি বিশ্বজুড়ে শান্তি ও মানবতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন