ভাষা হারানোর ঝুঁকিতে থাকা আদিবাসীদের বাঁচাতে এল নতুন প্রযুক্তি!

ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষার এক নতুন দিগন্ত: প্রযুক্তির সহায়তায় বিলুপ্তপ্রায় ভাষা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা।

ভাষা মানুষের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভাষা হারিয়ে যাওয়া মানে একটি জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আত্মপরিচয়কে হারানো।

বর্তমানে বিশ্বে দ্রুত গতিতে ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে আদিবাসী ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে, যা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের আদিবাসী আনিশিনাবে সম্প্রদায়ের ড্যানিয়েল বয়ার এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তিনি ‘স্কোবট’ নামে একটি ভাষা শিক্ষণ রোবট তৈরি করেছেন।

এই রোবটটি বিশেষভাবে আনিশিনাবে শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যা তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলতে এবং শিখতে সাহায্য করে। স্কোবট অনেকটা খেলনার মতো, যা শিশুদের কাছে ভাষা শেখার প্রক্রিয়াটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

যখন কোনো শিশু ইংরেজি শব্দ বলে, তখন স্কোবট সেই শব্দের আনিশিনাবে ভাষার অডিও শোনায়।

ভাষা পুনরুদ্ধারের এই মিশনে, শুধু বয়ার একাই নন, আরও অনেকে কাজ করছেন। জারেড কোলম্যান নামের একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ তার সম্প্রদায়ের ভাষা, ‘ওউয়েন্স ভ্যালি পাইউট’ ভাষার পুনরুদ্ধারে কাজ করছেন।

তিনি এই ভাষার শব্দভাণ্ডার তৈরি করেছেন এবং একটি অনলাইন অভিধান, বাক্য তৈরি ও অনুবাদ করার মতো সরঞ্জাম তৈরি করেছেন। এর মাধ্যমে ভাষার জ্ঞান আরও সহজলভ্য হবে এবং মানুষজন ভাষাটি শিখতে উৎসাহিত হবে।

প্রযুক্তিগত উন্নয়নের এই যুগে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই (AI)-এর ব্যবহার ভাষা সংরক্ষণে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। তবে, এক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা জরুরি।

ভাষার সংরক্ষণ এবং বিকাশে এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে, স্থানীয় সম্প্রদায়ের অধিকার ও সম্মানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। বয়ার মনে করেন, ভাষা শেখার কাজটি কেবল রোবট বা প্রযুক্তিনির্ভর হলে চলবে না, বরং এতে সম্প্রদায়ের সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকতে হবে।

ভাষা সংরক্ষণে প্রযুক্তির ব্যবহার নিঃসন্দেহে একটি আশাব্যঞ্জক দিক। তবে, এর সফলতার জন্য প্রয়োজন স্থানীয় সম্প্রদায়ের সক্রিয়তা, সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহার।

একইসঙ্গে, ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে, যা একটি ভাষার টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। আমাদের দেশেও ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম।

তাই, প্রযুক্তির সহায়তায় বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোকে বাঁচানোর এই প্রচেষ্টা আমাদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *