ইউক্রেনে শীত আসন্ন: বাতি জ্বালিয়ে রাখতে কী করতে হবে
যুদ্ধ যখন চলছে, ইউক্রেনের জন্য শীতকাল এক কঠিন পরীক্ষা নিয়ে আসে। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার লক্ষ্যবস্তু এখন দেশটির বিদ্যুৎ অবকাঠামো।
শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেনীয়দের টিকে থাকার লড়াই আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পর ইউক্রেনে কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যেন অন্য কিছু ভাবছেন।
তিনি শীতকে কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছেন। তার কৌশল হলো— হয় আমার শর্ত মানো, নয়তো তীব্র শীতে জমে মরো।
অতীতেও পুতিন এই কৌশল চেষ্টা করেছেন। গত দুই শীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলো ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং জনগণের জীবনযাত্রা সচল রাখতে সহায়তা করেছে। কিন্তু এবার প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্র কি সেই সহায়তা অব্যাহত রাখবে?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কর্মকর্তাদের মতে, রাশিয়া ইউক্রেনের বিদ্যুৎ গ্রিডকে দুর্বল করতে চাইছে। এর মাধ্যমে তারা শীতকালে দেশটির জনগণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে চায়।
শীতকালে যাতে ইউক্রেনীয়রা কষ্ট পায়, সেজন্য রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে দেশটির বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে আঘাত হানছে।
শীতের প্রস্তুতি: অতীতের অভিজ্ঞতা
আগের বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২০২২ ও ২০২৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল। তারা ইউরোপের সঙ্গে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করে এবং শীতের আগে ইউক্রেনে পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করে।
এছাড়াও, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, যেমন—পানি ও হিটিং সিস্টেমের জন্য মোবাইল জেনারেটর ও ব্যাকআপ পাওয়ার সরবরাহ করা হয়েছিল।
সৌদি আরব ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং মানবিক সহায়তার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দেয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারও ইউরোপে জ্বালানি রপ্তানি বাড়িয়েছিল, যা ইউক্রেনের জন্য জরুরি ছিল।
এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ, ২০২২ ও ২০২৩ সালের শীতকালে ইউক্রেন তুলনামূলকভাবে ভালোভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পেরেছিল।
তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, শীতের শুরুটা হয়তো হালকা হবে, কিন্তু জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারিতে তীব্র শীতের পূর্বাভাস রয়েছে।
এছাড়া, রাশিয়া ইরান থেকে পাওয়া ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা : অনিশ্চয়তা
এক্ষেত্রে উদ্বেগের বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত আগের মতো ততটা সক্রিয় নয়। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইউক্রেনে গ্যাস আমদানির জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত জেনারেটর ও অন্যান্য সরঞ্জাম মেরামতের চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে ইউক্রেনকে সহায়তা করার পুরোনো একটি প্রকল্প বাতিল করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে, শীতকালে রাশিয়ার আক্রমণ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র কি পদক্ষেপ নেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
যুদ্ধ এবং কূটনীতি: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই বলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করত না। তবে এমন দাবির সত্যতা যাচাই করা কঠিন।
ট্রাম্পের সময়ে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বেড়ে গিয়েছিল।
সম্প্রতি শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়া, ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে আলোচনার একটি সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়ার বর্তমান আগ্রাসী মনোভাবের কারণে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এসেছে।
এখন পর্যন্ত আলোচনার প্রধান বিষয়গুলো হলো— ভূমি বিনিময় এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা।
যুক্তরাষ্ট্রকে এখন ইউক্রেনকে শীতের সময় সহায়তা করতে হবে। একইসঙ্গে রাশিয়াকে এটাও বোঝাতে হবে যে, তাদের আগ্রাসনের ফল হবে মারাত্মক।
এর জন্য ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মাধ্যমে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করতে হবে।
উপসংহার
ইউক্রেন যদি এই শীত সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারে, তবে বসন্তে কূটনৈতিক আলোচনার পথ খুলতে পারে। তবে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সমর্থন ও রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন