আফগানিস্তানে ভূমিকম্প: ধ্বংসস্তূপে ঘরবাড়ি, স্বজন হারানোর শোক।
গত ৩১শে আগস্ট, আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প। এর ফলে দেশটির কুনার প্রদেশে ঘরবাড়ি, ক্ষেতখামার, এমনকি মানুষের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি, যা ক্রমাগত বাড়ছে। জাতিসংঘ ধারণা করছে, প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই শিশু।
কুনার প্রদেশের দুর্গম এলাকা, যেখানে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, সেখানে উদ্ধারকাজ চালানো রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় এবং ভারী যন্ত্রপাতি সেখানে পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায়, আহতদের উদ্ধার করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেওয়াগাল উপত্যকার বাসিন্দা আহমদ খান সাফি, ভূমিকম্পে তার ১০ কক্ষের বাড়িটি হারান। তিনি জানান, “আমি মাটির নিচে আটকা পড়ে গিয়েছিলাম, শ্বাস নিতে পারছিলাম না।
অনেক কষ্টে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু পাথরের আঘাতে আমার পা ভেঙে যায়।” তার পরিবারের ২২ জন সদস্য, যাদের মধ্যে শিশু, ভাই, ভাতিজা-ভাতিজি, সবাই ভূমিকম্পে নিহত হয়েছেন।
একইভাবে, চাউকে জেলার বাসিন্দা গোলাম রহমান, ভূমিকম্পে তার স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানকে হারিয়েছেন। তিনি জানান, “আমার মুখ ভর্তি হয়ে গিয়েছিল ধুলো এবং ছোট পাথরে, তাই ভালোভাবে কথা বলতে পারছিলাম না।
আমি শুধু আমার স্ত্রীর শেষ প্রার্থনা শুনতে পাচ্ছিলাম।
ভূমিকম্পের পর সেখানকার পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয়। ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায়, খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।
খাবার, পানি এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবার অভাবে তাদের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ইসলামিক রিলিফ চ্যারিটির একটি সমীক্ষা বলছে, কুনারে মাত্র ২ শতাংশ বাড়ি এখনো অক্ষত রয়েছে।
আফগানিস্তানের এই ভূমিকম্প সেখানকার মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। অনেক কৃষক তাদের গবাদি পশু হারিয়েছেন, ফলে তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
জাতিসংঘের মতে, বাস্তুচ্যুত হওয়া আফগানরা প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ফিরে এসে নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু ভূমিকম্প তাদের সেই স্বপ্নও ভেঙে দিয়েছে।
আফগানিস্তানের এই দুর্যোগ বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি গভীর বার্তা নিয়ে আসে। এটি স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেকোনো সময় যে কারও জীবনকে ওলট-পালট করে দিতে পারে।
বাংলাদেশের মতো, আফগানিস্তানও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা একটি দেশ। এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস