বাতাস থেকে জল: মরুভূমিতেও কি মিলবে পানীয় জল? চাঞ্চল্যকর তথ্য!

শিরোনাম: বাতাস থেকে জল: বাংলাদেশের জন্য কি এক নতুন দিগন্ত?

বৃষ্টির দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে সুপেয় জলের সংকট বাড়ছে। দেশের অনেক অঞ্চলে আর্সেনিক দূষণ, লবণাক্ততা এবং খরার কারণে খাবার জলের অভাব একটি নিয়মিত সমস্যা।

এই পরিস্থিতিতে, বাতাস থেকে জল আহরণ প্রযুক্তি কি আমাদের জন্য নতুন কোনো সমাধান দিতে পারে?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিজ্ঞানীরা এমন এক নতুন প্রযুক্তির ওপর কাজ করছেন যা বাতাস থেকে জল সংগ্রহ করতে পারে। এই পদ্ধতিতে, বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে বাতাসের জলীয় বাষ্পকে ঘনীভূত করে পানীয় জল তৈরি করা হয়।

এই প্রযুক্তিকে “বায়ুমণ্ডলীয় জল আহরণ” (Atmospheric Water Harvesting) বলা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-এর প্রকৌশলীরা এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। তারা একটি বিশেষ ধরনের “হাইড্রোজেল” (Hydrogel) ব্যবহার করেন, যা দেখতে ব্ল্যাক বাবলের মতো।

এই পদার্থ বাতাসের জলীয় বাষ্প শুষে নেয় এবং সূর্যের তাপে সেই জলকে ঘনীভূত করে পানীয় জল তৈরি করে। তাদের তৈরি যন্ত্রটি প্রতিদিন প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কাপ জল উৎপাদন করতে পারে। শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চলে এই প্রযুক্তি পরীক্ষা করা হচ্ছে।

শুধু এমআইটি নয়, চিলির আটাকামা মরুভূমি এবং যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসেও একই ধরনের প্রকল্প চলছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক বর্গমিটার জায়গা থেকে প্রতিদিন প্রায় ০.১ গ্যালন জল উৎপাদন করা সম্ভব।

এমনকি, এমন একটি যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে যা গাছের পাতার মতো কাজ করে এবং বাতাস থেকে জল সংগ্রহ করতে পারে।

তবে, এই প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এর উচ্চ খরচ এবং জলের কম উৎপাদন।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই প্রযুক্তি এখনো প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় বেশ ব্যয়বহুল। উদাহরণস্বরূপ, একজন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত জলের খরচ শহরের কলের জলের চেয়ে ১০ গুণ বেশি হতে পারে।

অন্যদিকে, এই প্রযুক্তির কিছু সম্ভাবনাও রয়েছে। পানীয় জলের পাশাপাশি, শিল্প-কারখানায় অতি-বিশুদ্ধ জলের চাহিদা মেটাতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

এছাড়া, দুর্যোগ পরিস্থিতিতে যখন খাবার জলের অভাব দেখা দেয়, তখনও এই প্রযুক্তি কাজে আসতে পারে।

বর্তমানে, কয়েকটি বাণিজ্যিক কোম্পানি এই প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছে। ইসরায়েলি কোম্পানি H2OLL নেগেভ মরুভূমিতে একটি পাইলট প্রকল্প চালাচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ২০০ গ্যালনের বেশি জল উৎপাদন করা হচ্ছে।

এছাড়া, ডেলওয়ারের এয়ারজোল (AirJoule) নামের একটি কোম্পানি শিল্প-কারখানার বর্জ্য তাপ ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ গ্যালন জল উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলীয় জল আহরণ প্রযুক্তি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এর খরচ কমানো এবং উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আরও গবেষণা ও উন্নয়নের প্রয়োজন।

তবে, জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুগে, যখন সুপেয় জলের সংকট বাড়ছে, তখন এই প্রযুক্তি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা নিয়ে আসে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, বায়ুমণ্ডলীয় জল আহরণ প্রযুক্তি উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ততা এবং আর্সেনিক দূষণ কবলিত এলাকার মানুষের জন্য সুপেয় জলের বিকল্প সরবরাহ করতে পারে।

তবে, এর কার্যকর প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন গবেষণা, উন্নয়ন এবং স্থানীয় চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই প্রযুক্তিকে অভিযোজিত করা।

ভবিষ্যতে, যদি এই প্রযুক্তি সফলভাবে উন্নত ও প্রয়োগ করা যায়, তবে তা বাংলাদেশের জল সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *