হারিয়ে যাওয়া জীবন ফিরে পাওয়ার এক নতুন দিগন্ত! আমেরিকার বিজ্ঞানীরা শুকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের পরীক্ষা শুরু করেছেন, যা মানবজীবনে এক আশার আলো দেখাচ্ছে। সম্প্রতি, নিউ হ্যাম্পশায়ারের একজন ৫৪ বছর বয়সী ব্যক্তি, বিল স্টুয়ার্ট, এই পরীক্ষামূলক পদ্ধতির মাধ্যমে শুকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন এবং তিনি সুস্থ আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, বিল স্টুয়ার্টের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিল স্টুয়ার্ট দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন এবং ডায়ালাইসিসের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। তিনি এই পরীক্ষামূলক গবেষণায় অংশ নিতে পেরে আনন্দিত এবং বিজ্ঞানকে সহায়তা করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করেন।
এই সাফল্যের পাশাপাশি, আরও একজন নিউ হ্যাম্পশায়ারের বাসিন্দা, টিম অ্যান্ড্রুস, প্রায় সাত মাস ধরে শুকরের কিডনি নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। এটি একটি রেকর্ড, কারণ আগে জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত শুকরের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এত দীর্ঘ সময় ধরে সুস্থ থাকার নজির ছিল না।
কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মানব অঙ্গের তীব্র সংকটের কারণে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই বিকল্প খুঁজছিলেন। এই পরিস্থিতিতে, শুকরের অঙ্গ প্রতিস্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। বিজ্ঞানীরা শুকরের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের অঙ্গকে মানুষের শরীরের জন্য আরও উপযোগী করে তুলছেন, যাতে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এটিকে সহজে প্রত্যাখ্যান করতে না পারে।
মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এই বিষয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার অনুমোদন দিয়েছে। এই ট্রায়ালে, পঞ্চাশ বছর বা তার বেশি বয়সী, ডায়ালাইসিস-এর উপর নির্ভরশীল এবং প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা ৩০ জন রোগীর শরীরে শুকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরীক্ষাগুলো সফল হলে, কিডনি বিকল রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিসের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ তৈরি হবে। যদিও এখনই বলা কঠিন যে শুকরের কিডনি কত দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে, তবে এটি রোগীদের জন্য মূল্যবান সময় তৈরি করতে পারে, যতক্ষণ না তারা মানব কিডনি পান।
বাংলাদেশেও কিডনি রোগের সমস্যা ব্যাপক। এখানে প্রতি বছর অনেক মানুষ কিডনি বিকল হয়ে মারা যান, এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার অভাবে অনেকেই কষ্ট পান। উন্নত বিশ্বে এই ধরনের গবেষণা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি আমাদের দেশের রোগীদের জন্য নতুন আশা জাগায়। এই পরীক্ষাগুলো সফল হলে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, যা রোগীদের জীবন বাঁচাবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।