নেপালে বিক্ষোভে ১৪ জনের মৃত্যু: ক্ষোভে ফুঁসছে প্রজন্ম!

নেপালে অস্থিরতা: সামাজিক মাধ্যম বন্ধ, দুর্নীতি ও তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ।

কাঠমান্ডু: নেপালে সরকার কর্তৃক সামাজিক মাধ্যম বন্ধ এবং ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক সুযোগের অভাবের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। এই বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত এক ডজনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা মূলত তরুণ প্রজন্মের, যাদের বয়স ১৩ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।

সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান, টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছুঁড়েছে। রয়টার্স সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনীর আক্রমণে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং সরকারি অফিসের বাইরে ভাঙচুর চালায়। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করা হলেও বিক্ষোভকারীরা তা উপেক্ষা করে।

বিক্ষোভের কারণ।

বিক্ষোভের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সরকারের দুর্নীতি। অনেক নেপালী মনে করেন, তাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি চলছে এবং এর প্রতিকার হচ্ছে না।

এছাড়া, সরকার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব ও টুইটার (এক্স)-এর মতো সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ায় জনমনে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভুয়া খবর ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যদিও পরে সরকার সামাজিক মাধ্যম থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

এছাড়াও, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে নেপালে ১৫-২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ২০.৮ শতাংশ।

“নেপো কিডস”-এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ।

রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে অনলাইনে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই “নেপো কিডস”-এর (রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান) বিরুদ্ধে ক্ষোভ সাধারণ মানুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

অর্থনীতি ও প্রবাসী শ্রমিক।

নেপালের অর্থনীতি মূলত প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশটির মোট জিডিপির ৩৩.১ শতাংশ আসে ব্যক্তিগত রেমিট্যান্স থেকে, যা গত তিন দশকে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া।

সহিংসতা ও বিক্ষোভের জেরে নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখাক পদত্যাগ করেছেন। কৃষিমন্ত্রী ও জলসম্পদ মন্ত্রীও পদত্যাগ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি বিক্ষোভের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং এর জন্য কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে দায়ী করেছেন। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিকতা।

নেপালের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব এবং সামাজিক মাধ্যমের স্বাধীনতা—এগুলো উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও কর্মসংস্থান ও ভালো ভবিষ্যতের প্রত্যাশা রয়েছে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, এএনআই ও সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *