মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষার ফল: গণিত ও পঠনে দুর্বল হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণিত, পঠন এবং বিজ্ঞানে দুর্বল ফল, যা উদ্বেগের কারণ।

বিশ্বজুড়ে, একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার নাগরিকদের শিক্ষার মানের ওপর। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে নিয়মিতভাবে কাজ করে চলেছে, কারণ তারা জানে, উন্নত শিক্ষা-ব্যবস্থা তৈরি করতে না পারলে, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন হবে।

সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের শিক্ষাগত দুর্বলতা বিশেষভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দেশটির জাতীয় মূল্যায়ন পরীক্ষার (National Assessment of Education Progress – NAEP) ফলাফলে দেখা গেছে, উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণিত এবং পঠন উভয় ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ছে।

এই পরীক্ষার ফল অনুযায়ী, দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্কোর গত কুড়ি বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুধু তাই নয়, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও বিজ্ঞান বিষয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে পড়েছে।

পরীক্ষার এই ফলগুলো শিক্ষাবিদদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। কারণ, এই ধরনের স্কোর প্রমাণ করে, শিক্ষার্থীরা তাদের মৌলিক জ্ঞান অর্জনেও পিছিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ অতিমারী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় প্রভাব ফেলেছে, তবে এই অবনমনের মূল কারণ এটি একাই নয়। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই দুর্বলতার পেছনে আরও অনেকগুলো কারণ বিদ্যমান।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো— শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম, মনোযোগের অভাব এবং দীর্ঘ প্রবন্ধ বা বই পড়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পাঠ্যক্রমের পরিবর্তনের কারণেও পঠন-ক্ষমতা কমেছে। এখনকার পাঠ্যক্রমে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যাংশ এবং বইয়ের অংশবিশেষের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়।

আগে যেখানে শিক্ষার্থীরা বছরে ২০টির বেশি বই পড়ত, সেখানে এখনকার পাঠ্যক্রমে মাত্র কয়েকটি বই অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাঠ্য বই কম পড়ার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর ধারণা তৈরি হচ্ছে না, যা তাদের ভালো পাঠক হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনেক শিক্ষার্থী এখনো মৌলিক বিষয়েও পারদর্শীতা অর্জন করতে পারেনি। গণিতে, দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের প্রত্যাশিত মানের নিচে স্কোর করেছে।

এই হার ২০০৫ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। উচ্চ বিদ্যালয়ের মাত্র ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কলেজ-পর্যায়ের গণিত কোর্সের জন্য প্রস্তুত ছিল, যেখানে ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৭ শতাংশ।

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) বিষয়েও মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো দেখা গেছে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, এই ফলাফলের একটি প্রধান কারণ হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ কমে যাওয়া। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে।

এর ফলে তাদের বিজ্ঞান বিষয়ক ধারণাগুলো ভালোভাবে তৈরি হয়নি।

শিক্ষাবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে এখন জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে, উন্নত প্রযুক্তি এবং সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়বে, যা একটি জাতির ভবিষ্যৎকে দুর্বল করে দিতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *