ফিলিস্তিনের একটি ক্ষুদ্র মদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থা, যা ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবস্থিত, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের বাজারে তাদের উৎপাদিত বিয়ার পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। স্কটল্যান্ডের একটি সাহায্যকারী সংস্থার সহযোগিতায় এই কাজটি করা সম্ভব হয়েছে। এই ঘটনা একদিকে যেমন ফিলিস্তিনিদের টিকে থাকার লড়াইয়ের প্রতীক, তেমনই আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তায়েবেহ্ ব্রুইং কোম্পানি নামের এই মদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থার যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রায় ৩৪ বছর আগে, নাদিম খৌরি ও ডেভিড খৌরির হাত ধরে। কিন্তু তাদের পথ মসৃণ ছিল না। একদিকে যেমন ধর্মীয় কারণে অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকার প্রবণতা, তেমনই রয়েছে দশকের পর দশক ধরে চলা সংঘাত, জলের অভাব এবং ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের আগ্রাসন।
এই সমস্ত প্রতিকূলতা পেরিয়ে তাইয়েবেহ্-এর টিকে থাকাটাই যেন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস জঙ্গিদের হামলায় ১,২০০ জন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৬০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি। পশ্চিম তীরেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়, যার ফলে সেখানকার অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে।
ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন—সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই পরিস্থিতিতে, তাইয়েবেহ্-এর উৎপাদিত পণ্য যুক্তরাজ্যে পাঠানো ছিল এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। ইসরায়েলি সীমান্তগুলোতে কড়াকড়ি, দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া এবং অতিরিক্ত কাগজপত্রের ঝামেলা—সবকিছুই তাদের জন্য সমস্যা তৈরি করে।
এমন কঠিন সময়ে তাইয়েবেহ্-এর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে স্কটল্যান্ডের ‘ব্রুগুডার’ নামের একটি সংস্থা। এই সংস্থাটি সাধারণত ভালো কাজের উদ্দেশ্যে বিয়ার তৈরি করে থাকে। ব্রুগুডারের প্রতিষ্ঠাতা জেমস হিউজেস, তাইয়েবেহ্-এর সংগ্রাম সম্পর্কে একটি নিবন্ধ পড়ে তাদের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, সীমান্ত পার হওয়ার সমস্যাগুলো এড়িয়ে ব্যবসা বাড়ানো এবং দাতব্য কাজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা।
দুই সংস্থার মিলিত প্রয়াসে তৈরি হয়েছে ‘সান অ্যান্ড স্টোন’ নামের একটি বিয়ার। এটি তৈরি করা হয়েছে বাভারিয়ান হপস ও ব্রিটিশ মাল্ট ব্যবহার করে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কো-অপারেটিভ-এর ১,৬০০টি দোকানে এই বিয়ার পাওয়া যাচ্ছে।
মজার বিষয় হলো, এই বিয়ার বিক্রির সমস্ত লাভ স্থানীয় ফিলিস্তিনি দাতব্য সংস্থা এবং ‘ডিসাস্টার্স ইমার্জেন্সি কমিটি’-কে দেওয়া হবে। এই কমিটি গাজা এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করে থাকে।
ব্রুগুডারের জেমস হিউজেস বলেন, তারা মানবিকতা ও সহানুভূতির জায়গা থেকে এই কাজটি করছেন। তিনি আশা করেন, এই সহযোগিতা ফিলিস্তিনিদের প্রতি অন্যদেরও সাহায্য করতে উৎসাহিত করবে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষ কিভাবে টিকে থাকতে পারে এবং অন্যদের জন্য আশা জাগাতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস