১০০ মিলিয়ন ডলার আছে? সরকারের এই বিলাসবহুল ইয়টটি দেখুন!

ডলারের হিসেবে শতকোটি টাকার বেশি দামে বিক্রি হতে যাওয়া একটি বিলাসবহুল ইয়ট-এর খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বেশ আলোচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এই বিশাল নৌযানটি নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

‘আমাদিয়া’ নামের এই ইয়টটি রাশিয়ার এক বিলিওনেয়ারের মালিকানাধীন ছিল, এমন অভিযোগে জব্দ করা হয়েছিল। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার উপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সেই প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

**জব্দের কারণ ও প্রেক্ষাপট**

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে রাশিয়ার বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সম্পদ।

‘আমাদিয়া’ তেমনই একটি সম্পদ, যা দেশটির বিচার বিভাগ বাজেয়াপ্ত করেছে। অভিযোগ ছিল, ইয়টটির মালিকানা ছিল রুশ বিলিওনেয়ার সুলেমান কেরিমভের এবং তিনি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিধি লঙ্ঘন করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, কেরিমভ একসময় এই ইয়টের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ মেটাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহার করেছিলেন, যা ছিল নিষেধাজ্ঞার পরিপন্থী।

**বিলাসবহুল ইয়টের বিবরণ**

‘আমাদিয়া’ একটি বিশাল আকারের নৌযান, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৪৮ ফুট। এতে রয়েছে আটটি বিলাসবহুল কেবিন, একটি ইনফিনিটি পুল, একটি হেলিপ্যাড, একটি সনা এবং অন্যান্য আধুনিক সুবিধা।

২০১৬ সালে নির্মিত এই ইয়টটিতে একটি মার্বেল পাথরের অগ্নিকুণ্ড ও পিয়ানো সহ একটি গ্র্যান্ড সেলুন, একটি জিম, হেলথ সেন্টার, ব্যক্তিগত সিনেমা হল এবং এমনকি একটি লবস্টার ট্যাঙ্কও রয়েছে।

একসময় এই ইয়টটির মূল্য ছিল প্রায় ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার বেশি)। তবে বর্তমানে এর দাম কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ থেকে ১২ কোটি মার্কিন ডলারে (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৮৮০ থেকে ১,৩০০ কোটি টাকার মতো)।

**নিলাম প্রক্রিয়া এবং আইনি জটিলতা**

যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই ইয়টটি নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিলামের জন্য আগ্রহীদেরকে এক কোটি মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১১০ কোটি টাকা) জমা দিতে হবে।

তবে, এই নিলাম প্রক্রিয়াটি বেশ কয়েকটি আইনি জটিলতার মধ্যে পড়েছে। আদালতে ইয়টটির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক চলছে।

রাশিয়ার আরেকজন ব্যবসায়ী, এডুয়ার্ড খুদাইনাতোভ এবং মিলেমারিন ইনভেস্টমেন্টস নামক একটি প্রতিষ্ঠান এই ইয়টের মালিকানা দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাদের দাবি, তারাই এই ইয়টের আসল মালিক।

তবে, আদালতের একটি রায়ে বলা হয়েছে, খুদাইনাতোভ এবং মিলেমারিন ইনভেস্টমেন্টস কেবল নামমাত্র মালিক, আসল মালিক তারা নন।

তবে, খুদাইনাতোভ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। ফলে ইয়টটির নিলাম প্রক্রিয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। খুদাইনাতোভের আইনজীবী এই নিলামকে ‘অনিয়মিত’ এবং ‘অসময়ে নেওয়া পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই আইনি জটিলতার কারণে ন্যায্য মূল্যে ইয়টটি বিক্রি করা কঠিন হবে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ বলছে, তারা দ্রুত এই সম্পত্তি বিক্রি করতে চায়। তাদের মতে, আদালতের রায় তাদের পক্ষেই যাবে এবং খুদাইনাতোভের আপিলের কারণে বিক্রয় প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে, ইয়টটির রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবহন এবং সংরক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার প্রায় ৩ কোটি ২০ লক্ষ ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৩৫২ কোটি টাকা) খরচ করেছে।

আইনি লড়াইয়ের কারণে ইয়টটির বিক্রি বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে, শেষ পর্যন্ত এই বিলাসবহুল নৌযানটির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *