শেয়ার বাজারে বড় উত্থান! ‘এআই’ তে উড়ছে ওরাকল, বাড়ছে বিনিয়োগ?

শিরোনাম: মার্কিন বাজারের উত্থান-পতনের মাঝে এশিয়ার শেয়ার বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, বাংলাদেশের জন্য সুযোগ?

আন্তর্জাতিক বাজারে বৃহস্পতিবার দিনভর বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে, যার প্রভাব পড়েছে এশিয়ার বিভিন্ন শেয়ার বাজারে। একদিকে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে, তেমনই প্রযুক্তি খাতের কিছু কোম্পানির ভালো ফল দেখা গেছে।

তবে এর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের শেয়ার সূচকে ভিন্ন চিত্রও লক্ষ্য করা গেছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কি কোনো সুযোগ তৈরি হতে পারে?

জাপানের শেয়ার বাজার, বিশেষ করে টোকিওর নিক্কেই ২২৫ সূচক, দিনের শুরুতে ০.৮ শতাংশ বেড়ে ৪৪,১৭১.০৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছিল। প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগকারী সফটব্যাঙ্ক গ্রুপের শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জাপানের বাজারে উৎপাদনকারীদের দাম বেড়েছে, যা বাজারের প্রত্যাশা মতোই ছিল। খাদ্য, পরিবহন সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতির দাম বাড়ায় মূল্যবৃদ্ধিতে এর প্রভাব পড়েছে।

অন্যদিকে, চীনের বাজারে হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ০.৩ শতাংশ কমে ২৬,১২৪.৮৫ পয়েন্টে নেমে আসে। তবে সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১.১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮৫৫.১০ পয়েন্টে।

চীনের চিপ প্রস্তুতকারক কোম্পানি সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশনের শেয়ার প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়াও, হুয়া হং সেমিকন্ডাক্টর এবং ক্যামব্রিকন টেকনোলজিসের শেয়ারের দামও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি সূচক সামান্য ০.৪ শতাংশ বেড়ে ৩,৩২৬.১৫ পয়েন্টে পৌঁছেছে। অস্ট্রেলিয়ার এসএন্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক ০.৪ শতাংশ কমেছে।

ভারতের বিএসই সেনসেক্স সামান্য বেড়েছে, আর তাইওয়ানের তাইওয়াক্স সূচক ০.৪ শতাংশ বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের এই অস্থিরতা মূলত ওয়াল স্ট্রিটের রেকর্ড গড়ার প্রবণতার কারণে। টোকিও এবং সিউলের ব্যবসায়ীরা সেই ধারা বজায় রাখার চেষ্টা করলেও, হংকং এবং সিডনির বাজার সেভাবে সাড়া দিতে পারেনি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বুধবার এসএন্ডপি ৫০০ সূচক ০.৩ শতাংশ বেড়েছে এবং টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সর্বকালের রেকর্ড গড়েছে। ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ২২0 পয়েন্ট কমেছে, এবং নাসডাক কম্পোজিট সামান্য বেড়েছে।

বাজারে এমন উত্থান-পতনের কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে—এমন প্রত্যাশা।

এই পরিস্থিতিতে, প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলির মধ্যে ওরাকলের শেয়ারের দাম প্রায় ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। জানা গেছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই-এর চাহিদা বাড়ায় তাদের ব্যবসায় ভালো ফল হয়েছে।

তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, যারা এআই এবং অন্যান্য কম্পিউটিংয়ের জন্য চিপ তৈরি করে, তাদের শেয়ারের দামও বেড়েছে।

অন্যদিকে, অ্যাপলের শেয়ারের দর কমে যাওয়ায় ডাউ-কে দুর্বল করে দেয়, যা এসএন্ডপি ৫০০-এর উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, নতুন আইফোন উন্মোচন তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না, যা চাহিদাকে খুব বেশি প্রভাবিত করবে না।

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম সামান্য কমেছে, যেখানে মার্কিন অপরিশোধিত তেলের প্রতি ব্যারেলের দাম ছিল ৬৩.৫৩ ডলার এবং ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ৬৭.৩৫ ডলার। ডলারের দাম কিছুটা বেড়েছে, যেখানে ইউএস ডলারের দাম জাপানি ইয়েনের বিপরীতে ছিল ১৪৭.৪৩।

এই বাজারের অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নানাভাবে প্রভাবিত করতে পারে। প্রযুক্তি খাতের উত্থান, বিশেষ করে এআই-এর ক্রমবর্ধমান চাহিদা, বাংলাদেশের আইটি সেক্টরের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে।

এছাড়া, বিশ্ববাজারে সুদের হার কমার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায়, তা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা বয়ে আনতে পারে। তবে, বাজারের এই পরিবর্তনগুলো দেশের অর্থনীতির উপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নির্ভর করবে সরকারের নীতিনির্ধারণ এবং বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ওপর।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *