ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোকে আদালত কারাদণ্ড দিলেও দেশটির রাজনীতিতে তার প্রভাব এখনো বেশ জোরালো। সম্প্রতি, একটি মামলার রায়ে তার ২৭ বছরের বেশি কারাদণ্ড হয়, কিন্তু এরপরও তিনি দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।
এমনকি, ২০২৬ সালের নির্বাচনেও তার দল বা সমর্থকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বোলসোনারোর বিরুদ্ধে আনা হয় অভ্যুত্থানের চেষ্টার অভিযোগ। যদিও তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না, তারপরও তার সমর্থক এবং বিরোধীদের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে।
অনেকে মনে করেন, তার এই কারাদণ্ড রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করতে পারেনি, বরং তার আদর্শ এখনো অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কারাদণ্ডের পরও সম্ভবত ব্রাজিলের রাজনীতিতে নতুন কিছু ঘটতে যাচ্ছে। এমন একজন নেতা, যিনি হয়তো সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন না, কিন্তু তার প্রভাব রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করবে।
এই পরিস্থিতিতে, দেশটির জনগণও দ্বিধাবিভক্ত। একদিকে, অনেকে মনে করেন, তাকে জেলে পাঠানো উচিত। আবার, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ তার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।
স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে বোলসোনারোর সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, তিনি একজন ‘হিরো’।
তাদের মতে, আদর্শকে বন্দী করা যায় না। বোলসোনারোকে কারাগারে রাখলেও তার অনুসারীরা তাদের আদর্শ ধরে রাখবেন।
বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, বোলসোনারো এখনো ব্রাজিলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এমনকি, কারাবন্দী থাকা অবস্থায়ও তিনি ২০২৬ সালের নির্বাচনে তার জোটের প্রার্থী কে হবেন, তা প্রভাবিত করতে পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা da সিলভার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে বিরোধী দলের যেকোনো প্রার্থীকে বোলসোনারোর সমর্থন পেতে হবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, যদি এখনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে লুলা এবং বোলসোনারোর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
জরিপে, বোলসোনারোকে ৪৫.৪% এবং লুলাকে ৪৪.৬% সমর্থন করার সম্ভাবনা দেখা গেছে।
বোলসোনারোর কারাদণ্ডের বিষয়েও জনমত বিভক্ত। আগস্ট মাসের একটি জরিপে দেখা গেছে, ব্রাজিলের ৪৮% মানুষ বোলসোনারোর কারাবাস চান, যেখানে ৪৬% মানুষ তাকে মুক্তি দেওয়ার পক্ষে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইসাবেলা কালিলের মতে, বোলসোনারোকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ, এমন ঘটনার পরেও তিনি তার সমর্থক ধরে রেখেছেন এবং ডানপন্থীদের মধ্যে তার প্রভাব এখনো বিদ্যমান।
বোলসোনারোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী, যাজক সিলস মালাফাইয়া মনে করেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের গুরুত্ব কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, “বোলসোনারো কারাগারে থাকুক বা না থাকুক, কেউ তার প্রভাব কেড়ে নিতে পারবে না। তিনি এখনো লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী ডানপন্থী নেতা।”
বোলসোনারোর অনেক সমর্থক তাকে কারামুক্ত করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা কংগ্রেসের মাধ্যমে একটি সাধারণ ক্ষমা বিল পাসের চেষ্টা করছেন।
এমনকি, অনেকে তার রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছেন। কারণ, অন্য একটি মামলায় ২০৩০ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণে তার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
তবে, এরই মধ্যে ব্রাজিলের ডানপন্থী নেতারা বিকল্প পরিকল্পনা শুরু করেছেন। সাও পাওলোর গভর্নর টারসিসিয়ো দে ফ্রেইটাস এবং পারানার গভর্নর রাতিনিও জুনিয়রকে বোলসোনারোর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এমনকি, বোলসোনারোর ছেলে সিনেটর ফ্ল্যাভিও বোলসোনারোও আলোচনায় রয়েছেন।
সাও পাওলোর গভর্নর দে ফ্রেইটাস ২০২৬ সালের নির্বাচনে শক্তিশালী প্রার্থী হতে পারেন। তিনি এরই মধ্যে বোলসোনারোর মুক্তি এবং তার রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বোলসোনারোর কারাদণ্ড ব্রাজিলের রাজনীতিতে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।
তাদের মতে, ‘বোলসোনারোবাদ’ এখনো টিকে থাকবে। কারণ, বোলসোনারো হয়তো দৃশ্যত দুর্বল হয়েছেন, কিন্তু তার সমর্থকরা নতুন প্রজন্মের নেতাদের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
এই তালিকায় মিশেল বোলসোনারো, নিকোলাস ফেরেইরা এবং অন্যান্য ধর্মীয় নেতারা রয়েছেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস