যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা যেন থামছেই না। সম্প্রতি দেশটির বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে, যা গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। রক্ষণশীল অ্যাক্টিভিস্ট চার্লি কার্কের ওপর হামলার ঘটনা এই সহিংসতার সর্বশেষ উদাহরণ। এই ধরনের সহিংসতা কেবল বর্তমানের সমস্যা নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে গভীর শিকড় গেড়ে বসেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চলতি বছর, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৫০টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মাইকেল জেনসেনের মতে, এই বৃদ্ধি রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও এর নীতির প্রতি ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের প্রতিফলন। এই ধরনের সহিংসতার পেছনে কোনো নির্দিষ্ট দল বা আদর্শের যোগ নেই, বরং এটি একটি বৃহত্তর নাগরিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক:
- ১৪ জুন, ২০২৫: মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের আইনসভার শীর্ষ ডেমোক্রেট সদস্য এবং তাঁর স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হামলাকারী পুলিশের পোশাক পরে এসেছিল। একই ব্যক্তি ডেমোক্রেট সিনেটর জন হফম্যান ও তাঁর স্ত্রীকে গুলি করে আহত করে। হামলাকারীর গাড়িতে ডেমোক্রেট রাজনীতিবিদ এবং পরিকল্পিত পরিবার (Planned Parenthood)-এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নাম পাওয়া যায়।
- ১৩ এপ্রিল, ২০২৫: পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জশ শাপির বাসভবনে ‘মলোটভ ককটেল’ নিক্ষেপ করা হয়। গভর্নর ও তাঁর পরিবারকে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে হয়। হামলাকারী জানান, গাজায় যুদ্ধের বিষয়ে শাপির দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি এই হামলা চালিয়েছেন।
- ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪: ফ্লোরিডায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি গলফ ক্লাবের কাছে এক ব্যক্তিকে রাইফেলসহ আটক করা হয়। ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে তাঁর বিচার চলছে।
- ১৩ জুলাই, ২০২৪: পেনসিলভানিয়ার একটি নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এতে ট্রাম্প আহত হন এবং আরও কয়েকজন হতাহত হন।
- ২৮ অক্টোবর, ২০২২: হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সান ফ্রান্সিসকোর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীর উদ্দেশ্য ছিল তাকে অপহরণ করা। তবে ন্যান্সি পেলোসি সেসময় বাড়িতে ছিলেন না। হামলাকারী তাঁর স্বামী পল পেলোসিকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে।
- ৮ জুন, ২০২২: সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ব্রেট কাভানার মেরিল্যান্ডের বাড়ির কাছে এক ব্যক্তি নিজেকে মেরে ফেলার কথা জানান এবং তাঁর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ওই ব্যক্তি জানান, তিনি একজন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতিকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন।
- ৬ জানুয়ারি, ২০২১: যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে হামলা হয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা এই হামলা চালায়। এর আগে ট্রাম্প সমাবেশে তাঁর সমর্থকদের ক্যাপিটলে যেতে এবং ‘প্রাণপণে লড়াই করতে’ বলেন। এই ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয় এবং ১৪০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
- অক্টোবর, ২০২০: মিশিগানের ডেমোক্রেটিক গভর্নর গ্রেচেন হুইটমারকে অপহরণের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গভর্নর কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন, যার কারণে তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন।
- ২০১১-২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের কয়েকটি ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একজন ইরাক যুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি, যিনি হোয়াইট হাউসের বেড়া টপকে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলেন, এবং অপর এক ব্যক্তি ছুরি ও গুলি ভর্তি একটি জিপ নিয়ে হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা গেটে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস দীর্ঘ। জর্জ ওয়াশিংটন থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত, সবাই বিভিন্ন সময়ে হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতা গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনা ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন