মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। এবার তিনি বামপন্থী দল ও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি পুরনো ফেডারেল আইন ব্যবহারের কথা বলছেন।
এই আইনের মাধ্যমে এক সময়ের কুখ্যাত মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প ‘র্যাকেটিয়ার ইনফ্রুয়েন্সড অ্যান্ড কারাপ্ট অর্গানাইজেশনস অ্যাক্ট’ বা সংক্ষেপে ‘রিকো’ নামক একটি আইনের প্রয়োগ করতে চান।
এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো, যারা সহিংসতা উস্কে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। রিপাবলিকান দলের প্রভাবশালী কিছু সদস্যও ট্রাম্পের এই মতের সাথে সহমত পোষণ করেছেন।
তারা চাচ্ছেন, এই আইনের আওতায় দাঙ্গা বাধানোর মতো ঘটনাগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হোক। এমন একটি প্রস্তাবনার মাধ্যমে মূলত বামপন্থী দলগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন তারা।
সাম্প্রতিক সময়ে, রক্ষণশীল মহলে এই বিষয়টি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, চার্লি কার্ক নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর ট্রাম্প এবং তার সহযোগীরা এই ইস্যুতে বেশ সক্রিয় হয়েছেন।
তারা বলছেন, কার্কের মৃত্যুর ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারা বদ্ধপরিকর। এমনকি, কিছু বামপন্থী সংগঠনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
কিন্তু, ‘রিকো’ আইন আসলে কী? এই আইনের অধীনে, কোনো অপরাধমূলক চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এই আইনের আওতায়, অভিযুক্তদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা সহ কারাদণ্ড দেওয়ারও সুযোগ রয়েছে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছেন অনেকে। তাদের মতে, এর ফলে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার খর্ব হবে এবং ভিন্নমতের মানুষদের কণ্ঠরোধ করা হবে।
তারা আশঙ্কা করছেন, এই আইনের অপব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দমন করা হতে পারে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের সমর্থকরা বলছেন, এই আইন সহিংসতা বন্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে। তাদের যুক্তি হলো, যারা দাঙ্গায় অর্থ যোগান দেয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া গেলে, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা কমবে।
তবে, এই আইনের প্রয়োগ বেশ কঠিন। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘রিকো’ আইনের অধীনে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে, অপরাধের সঙ্গে জড়িত সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকতে হয়।
শুধু তাই নয়, প্রমাণ করতে হয় যে, সংঘটিত অপরাধগুলো একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে হয়েছে।
ট্রাম্প ইতোমধ্যেই বিশিষ্ট ডেমোক্র্যাট ও সমাজসেবী জর্জ সরোসের বিরুদ্ধেও এই আইনের প্রয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সরোসকে তিনি বামপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠীকে অর্থ যোগান দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
যদিও সরোস এবং তার সংগঠন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই ঘটনার জেরে, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধীরা মনে করছেন, ট্রাম্প তার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এই আইনকে ব্যবহার করতে চাইছেন।
তারা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিষয়টির আরও গভীরে যাওয়া দরকার, কারণ এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন