বিশ্বজুড়ে সমুদ্র ভ্রমণে নতুন দিগন্ত, বিশাল আকারের ক্রুজ শিপের চাহিদা বাড়ছে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সমুদ্র ভ্রমণের চাহিদা বাড়ছে, এবং এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিশাল আকারের ক্রুজ শিপের সংখ্যা। বিলাসবহুল ভ্রমণের এই ধারণার সাথে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক সব সুবিধা, যা যাত্রীদের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসছে।
সম্প্রতি, বিশ্বের বৃহত্তম ক্রুজ শিপ ‘আইকন অফ দ্য সিজ’-এর সাফল্যের পর, আরও তিনটি বিশাল আকারের জাহাজ তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান।
এই ‘আইকন ক্লাস’ পরিবারের জাহাজগুলো ১০০০ ফুটের বেশি লম্বা এবং প্রায় ৫,৬১০ জন যাত্রী বহনে সক্ষম। এরই মধ্যে ‘স্টার অফ দ্য সিজ’ নামের একটি জাহাজ যাত্রী পরিষেবা দিতে শুরু করেছে, যা পূর্ব ও পশ্চিম ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে চলাচল করছে।
এছাড়া, ২০২৬ সালের আগস্টে চালু হওয়ার কথা রয়েছে ‘লেজেন্ড অফ দ্য সিজ’ নামের আরেকটি জাহাজ, যেখানে থাকবে সমুদ্রের বুকে বৃহত্তম ওয়াটার পার্ক ‘Category 6’। চতুর্থ জাহাজটির নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে, যা ২০২৭ সালে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৩ সালে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লক্ষ যাত্রী সমুদ্র ভ্রমণে গেছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে, বিভিন্ন ক্রুজ লাইন তাদের জাহাজের বহর বৃদ্ধি করছে এবং অত্যাধুনিক সব সুবিধা যুক্ত করছে। এই ধরনের সুবিশাল জাহাজগুলোকে ‘সমুদ্রের শহর’ হিসেবেও বর্ণনা করা হচ্ছে, যেখানে রেস্টুরেন্ট, বার, সিনেমা এবং ওয়াটার স্লাইডের মতো বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।
নোরওয়েজিয়ান ক্রুজ লাইন তাদের নতুন জাহাজ ‘নোরওয়েজিয়ান অ্যাকোয়া’ নিয়ে এসেছে, যেখানে প্রায় ৩,৬০০ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবে। শুধু তাই নয়, ২০৩০ সাল থেকে তারা আরও চারটি বৃহৎ জাহাজ যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে, যেখানে প্রতিটি জাহাজে ৫,০০০ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবে।
এমএসসি ক্রুজও পিছিয়ে নেই, তারা ‘এমএসসি ওয়ার্ল্ড আমেরিকা’ নামের একটি জাহাজ চালু করেছে, যেখানে ৬,৭৬২ জন যাত্রী ভ্রমণের সুযোগ পাবে। কার্নিভাল ক্রুজ লাইনও ২০২৯ সাল থেকে নতুন শ্রেণির জাহাজ যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে, যেখানে প্রায় ৮,০০০ জন যাত্রী ভ্রমণের সুযোগ পাবে।
অন্যদিকে, যারা একটু ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা চান, তাদের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন গন্তব্য।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘সার্ফ আবু ধাবি’ তৈরি করেছে বিশ্বের দীর্ঘতম কৃত্রিম ওয়েভ পুল, যেখানে বিখ্যাত সার্ফার কেলি স্লেটারের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও এখানে সার্ফিং করা বেশ ব্যয়বহুল, প্রতি ৬টি ওয়েভের জন্য খরচ করতে হয় ৯৫০ মার্কিন ডলার।
বিশ্বজুড়ে সার্ফিং ট্যুরিজমও বাড়ছে, যা একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। শুধু ২০২৩ সালেই এই শিল্পের আয় ছিল প্রায় ৬৮.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০৩০ সাল নাগাদ ৯৫.৯৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
ফিলিপাইনের ‘সার্ফিং রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত সিয়ারগাও দ্বীপও তাদের পর্যটন অবকাঠামো উন্নত করার মাধ্যমে এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে।
এছাড়াও, আমেরিকান এক্সচেঞ্জ প্রজেক্টের মতো কিছু উদ্যোগ বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে, আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলের তরুণ-তরুণীরা একে অপরের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন