সকালে কফি পান বন্ধ! এক সপ্তাহ পর যা ঘটল…

শিরোনাম: সকালে কফি দেরিতে পান করা: একটি নতুন প্রবণতা এবং এর কার্যকারিতা

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি নতুন স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রবণতা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে, যেখানে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কফি পানের সময় ২ ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এই পদ্ধতির মূল ধারণা হলো, এটি শরীরে কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে এবং দুপুরের দিকে শরীরে শক্তি কমে যাওয়া (energy crash) রোধ করতে সহায়তা করে।

কিন্তু এই ধারণা কতটা যুক্তিযুক্ত? বিশেষ করে, যখন আমাদের দেশে চা পানের সংস্কৃতি এত গভীর, সেখানে কফি নিয়ে এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কতটা প্রাসঙ্গিক?

কর্টিসল হরমোন, যা স্ট্রেস হরমোন নামেও পরিচিত, শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য জরুরি। তবে এর অতিরিক্ত নিঃসরণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

কফির ক্যাফিন এই হরমোনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এই কারণে, কফি পানের সময় পরিবর্তন করে শরীরে কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

গবেষণায় কী জানা যায়?

এ বিষয়ে সীমিত সংখ্যক গবেষণা হয়েছে। তবে, একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুম থেকে ওঠার দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর কফি পান করলে কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি বা দুপুরের ক্লান্তি (afternoon slump) কমানো যায় না।

গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, ক্যাফিন গ্রহণের ফলে কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে, যারা প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন গ্রহণ করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে।

এমনকি, যারা ৩০০ থেকে ৬০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন গ্রহণ করেন, তাদের শরীরে এই প্রভাব নাও দেখা যেতে পারে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ক্যাফিন গ্রহণের সময় পরিবর্তন করলে দিনের বেলায় কর্টিসলের স্বাভাবিক কার্যকারিতায় তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। তবে, কফি পানের সময় পরিবর্তন করার তেমন কোনো ক্ষতিকর দিক নেই।

একজন ব্যক্তির অভিজ্ঞতা

এই বিষয়ে একটি ব্যক্তিগত পরীক্ষার কথা জানা যায়। সাধারণত, তিনি ঘুম থেকে ওঠার আধা ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১৩০ মিলিগ্রাম ক্যাফিনযুক্ত এক কাপ কফি পান করেন।

এই পরীক্ষায় তিনি সকালে কফি পানের সময় পরিবর্তন করে অন্তত ২ ঘণ্টা পর কফি পান করা শুরু করেন।

পরীক্ষার ফলাফল

পরীক্ষার সময় তিনি তার শরীরে তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করেননি। তার শক্তি, মানসিক চাপ বা মনোযোগের মাত্রায় উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি।

তবে, কফি পানের আগে তিনি কিছুটা ক্লান্ত অনুভব করেছেন।

কফি দেরিতে পান করার ফলে দুপুরের দিকে শরীরে শক্তি কমে যাওয়ার যে সমস্যা (afternoon crash) হয়, তার কোনো পরিবর্তন হয়নি।

অর্থাৎ, এই পরীক্ষা থেকে তেমন কোনো সুবিধা পাওয়া যায়নি।

সিদ্ধান্ত

বর্তমানে, কফি দেরিতে পান করলে কর্টিসলের মাত্রা কমে বা দুপুরের ক্লান্তি দূর হয়—এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কফি পানের সময় পরিবর্তন করা একটি ব্যক্তিগত বিষয়, যা প্রত্যেকের শরীরে ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে, এই বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার তেমন কোনো ক্ষতিকর দিক নেই।

আমাদের দেশে, চা পানের একটি বিশেষ সংস্কৃতি রয়েছে। তাই, কফি নিয়ে এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনেকের কাছে হয়তো নতুন এবং আকর্ষণীয় হতে পারে।

তবে, স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোনো পরিবর্তনের আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

তথ্য সূত্র: হেলথলাইন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *