যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অফশোর বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমতি বাতিল করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারের পথে একটি বড় বাধা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে সাউথকোস্ট উইন্ড প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি বাতিলের জন্য আবেদন করেছে ব্যুরো অফ ওশান এনার্জি ম্যানেজমেন্ট (বিওইএম)। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আট লক্ষ চল্লিশ হাজারেরও বেশি পরিবারের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ছিল।
পরিবেশবাদীদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ বায়ুবিদ্যুৎ শিল্পের ওপর একটি ‘পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ’-এর শামিল। এর আগে, ট্রাম্প প্রশাসন বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অফশোর বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছিল, কিছু প্রকল্পের অনুমতি বাতিল করেছিল এবং নতুন প্রকল্পে অর্থায়নও বন্ধ করে দেয়।
এই পদক্ষেপগুলি বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের নীতি থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। বাইডেন প্রশাসন ছয় মিলিয়নেরও বেশি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ১১টি বৃহৎ অফশোর বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে।
বর্তমানে, ট্রাম্পের নীতির কারণে এই প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের বায়ুবিদ্যুৎ খাতের জন্য একটি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ল স্কুল-এর জ্বালানি আইনের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার সভেনসেনের মতে, “যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের পরিবর্তে তারা ভালো বাজারের সন্ধান করবে।
ইতিমধ্যে, মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে একটি অফশোর বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের অনুমোদন বাতিলের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিভাগ। নিউ জার্সির আটলান্টিক শোরস প্রকল্পের অনুমতিও বাতিল করা হয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য বিবেচনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশ বর্তমানে তার ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল।
এই পরিস্থিতিতে, নবায়নযোগ্য শক্তি, বিশেষ করে বায়ুবিদ্যুৎ, বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হতে পারে। তবে, উন্নত দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী এই খাতের বিনিয়োগকে প্রভাবিত করতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি পরিবেশবান্ধব এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে সহায়ক। তাই, উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের প্রকল্পের প্রতি বিরূপ মনোভাব দেখা গেলে, তা উন্নয়নশীল দেশগুলোর সবুজ জ্বালানির লক্ষ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস