ভ্যাটিকানের আর্থিক কেলেঙ্কারি: বিচারের জল ঘোলা, পোপের ভূমিকা ও নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ভ্যাটিকান সিটির অভ্যন্তরে সংঘটিত হওয়া এক চাঞ্চল্যকর আর্থিক কেলেঙ্কারির বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আবারও সরগরম আন্তর্জাতিক অঙ্গন। লন্ডনে একটি সম্পত্তির বেআইনি বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে হওয়া এই মামলায় এবার সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
পোপ ফ্রান্সিসের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন, ফাঁস হয়েছে গোপন বার্তা, আর এর জেরে বিচারের নিরপেক্ষতা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।
আসল ঘটনা:
২০২১ সালে শুরু হওয়া এই মামলার মূল বিষয় ছিল লন্ডনের একটি বিলাসবহুল সম্পত্তি। অভিযোগ ছিল, ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ এই সম্পত্তি কিনতে গিয়ে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো (বর্তমান বিনিময় হারে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি) খরচ করেছে।
এর মধ্যে ব্রোকার ও কর্মকর্তাদের কমিশন বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ তছরুপ করা হয়। শুধু তাই নয়, সম্পত্তিটির নিয়ন্ত্রণ ছাড়ার জন্য ভ্যাটিকানকে ১৫ মিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ১৭০ কোটি টাকার বেশি) বেশি) মুক্তিপণ দিতে হয়েছিল।
গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ও তাদের ভূমিকা:
এই মামলার কেন্দ্রে ছিলেন কার্ডিনাল অ্যাঞ্জেলো বেচ্চু। তিনি একসময় প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন।
এছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন মন্সিনিওর আলবার্তো পের্লাসকা, ফ্রান্সেসকা চাওউকি এবং জেনিভিভ সিফেরি।
পোপের সংশ্লিষ্টতা:
মামলার তদন্ত চলাকালীন সময়ে পোপ ফ্রান্সিসের কিছু গোপন ডিক্রি প্রকাশ্যে আসে, যা তদন্তকারীদের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
তবে সম্প্রতি ফাঁস হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাগুলো সবকিছুকে নতুন মোড় দিয়েছে। জানা যায়, পোপ ফ্রান্সিস সরাসরি এই তদন্তের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমনকি, পের্লাসকাকে আর্থিক সাহায্যও করেছিলেন তিনি।
ফাঁস হওয়া বার্তা:
পত্রিকা ‘দোমানি’র মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া কয়েক হাজার পাতার হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাগুলোতে বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই বার্তাসমূহে ভ্যাটিকান পুলিশ, প্রসিকিউটর এবং প্রয়াত পোপের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, এই বার্তাগুলো তাদের মক্কেলদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার প্রমাণ।
অন্যান্য অভিযোগ:
আগের বিচারে কার্ডিনাল বেচ্চুকে অর্থ আত্মসাতের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি নিজের ভাইয়ের একটি দাতব্য সংস্থায় ভ্যাটিকানের ১ লক্ষ ইউরো (প্রায় ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার বেশি) পাঠিয়েছিলেন। এছাড়া, একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষককে কয়েক লক্ষ ইউরো দেওয়ারও অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
মামলার ভবিষ্যৎ:
এই মামলার আপিল শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে।
আইনজীবীরা নতুন করে পাওয়া তথ্যপ্রমাণ পেশ করে বিচারের রায় পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। তবে ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ বলছে, বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ ছিল।
এখন দেখার বিষয়, আপিল শুনানিতে কী রায় আসে।
আর্থিক কেলেঙ্কারির এই ঘটনা শুধু ভ্যাটিকানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এর প্রভাব রয়েছে।
কারণ, এই মামলার রায় বিভিন্ন দেশের আদালতগুলোতেও কার্যকর হতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস