যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক জিমি কিমেলের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যা শুধু তাঁর অনুষ্ঠান বন্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই।
বরং, এটি জড়িয়ে পড়েছে প্রভাবশালী মিডিয়া সংস্থা, সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের মধ্যেকার জটিল এক ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক সমীকরণে।
খবরটি এমনটাই জানাচ্ছে।
বিষয়টি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম সংস্থা এবিসি’র মালিক ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত।
ডিজনি প্রায়ই তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ, নতুন ব্যবসা কেনা বা বিক্রি করা অথবা লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ফেডারেল সরকারের অনুমোদন চেয়ে থাকে।
কিন্তু সম্প্রতি, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ডিজনি বিভিন্ন ধরনের তদন্তের শিকার হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে, সম্ভাব্য একচেটিয়া কারবার, কর্মী নিয়োগে পক্ষপাত এবং অনুষ্ঠান নির্মাণে বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের অভিযোগ।
মূল ঘটনা হলো, কমেডিয়ান জিমি কিমেল সম্প্রতি একটি মন্তব্যে বিতর্কিত হন।
তিনি একটি রক্ষণশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সমর্থকগোষ্ঠীর সমালোচনা করেন।
এরপরই এবিসি কর্তৃপক্ষ কিমেলের শো বন্ধ করে দেয়।
ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন (এফসিসি)-এর চেয়ারম্যান ব্রেন্ডন কার এই মন্তব্যকে ‘অত্যন্ত অসুস্থ’ বলে অভিহিত করেন এবং তাঁর সংস্থা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে জানান।
উল্লেখ্য, ব্রেন্ডন কার সরাসরি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুগত।
শোনা যায়, কিমেলের কৌতুক ট্রাম্পের পছন্দ ছিল না।
এই ঘটনার জেরে এবিসি’র সঙ্গে যুক্ত আরও কয়েকটি মিডিয়া সংস্থাও কিমেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।
এর মধ্যে রয়েছে, নেক্সস্টার মিডিয়া গ্রুপ এবং সিনক্লেয়ার ব্রডকাস্টিং, যারা দেশজুড়ে এবিসি’র প্রায় এক-চতুর্থাংশ স্টেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
ডিজনির বিরুদ্ধে এর আগেও ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধের অভিযোগ উঠেছে।
এমনকি, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করায়, গত ডিসেম্বরে ডিজনিকে ১ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল।
এছাড়া, সংখ্যালঘুদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ডিজনি তাদের কিছু নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।
শুধু তাই নয়, এপ্রিল মাসে এফসিসি-র পক্ষ থেকে ডিজনি কর্তৃপক্ষের প্রতি একটি কঠোর চিঠি পাঠানো হয়।
যেখানে অভিযোগ করা হয়, ডিজনি সম্ভবত ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ কিছু কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এবং এর মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, ডিজনি-র একটি স্ট্রিমিং পরিষেবা, ফুবোটিভি-র সঙ্গে চুক্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, এই চুক্তির বিষয়ে বিচার বিভাগ সম্ভাব্য একচেটিয়া কারবারের তদন্ত শুরু করেছে।
ফেডারেল ট্রেড কমিশনও (এফটিসি) তদন্ত শুরু করেছে, যেখানে শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ডিজনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিয়ম ভাঙার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই ঘটনার মীমাংসা হিসেবে ডিজনি ১ কোটি ডলার জরিমানা দিতে রাজি হয়েছে এবং তাদের নীতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এসবের বাইরে, ইএসপিএন-এর মাধ্যমে এনএফএল নেটওয়ার্ক অধিগ্রহণের জন্য এখনো ট্রাম্প প্রশাসনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ডিজনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনার সূত্রপাত অনেক আগে থেকেই।
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস, ডিজনির একটি নীতির সমালোচনা করেছিলেন, যা বিদ্যালয়ে যৌন বিষয়ক আলোচনা সীমিত করার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।
এমনকি, বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চার্লি কার্কও ডিজনির সমালোচনা করেছিলেন।
এদিকে, নেক্সস্টার মিডিয়া গ্রুপ এবং সিনক্লেয়ার ব্রডকাস্টিং-এর মতো মিডিয়া সংস্থাগুলোও সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
নেক্সস্টারকে তাদের ৬২০ কোটি ডলারের বিনিময়ে প্রতিপক্ষ টেগনা-কে কেনার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের অনুমোদন পেতে হবে।
সিনক্লেয়ারের ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ন্ত্রক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, গণমাধ্যম সংস্থাগুলোর উচিত আর্থিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানো।
বিষয়টি নিয়ে প্রাক্তন ডিজনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল আইজনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘নেতৃত্ব কোথায়?
যারা অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তাদের কি এগিয়ে আসা উচিত নয়?’
তবে, কিমেলের মন্তব্যের সমালোচনা হলেও, রক্ষণশীল মহলের অনেকেই মনে করেন, এই ঘটনায় সরকারের হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘যারা দীর্ঘদিন ধরে ‘ক্যানসেল কালচার’-এর শিকার, তাদের উচিত এর বিরোধিতা করা।
কারণ, বামপন্থীরা ক্ষমতায় ফিরলে, তারাই আবার আক্রমণের শিকার হবে।’
তথ্য সূত্র: