আতঙ্কে পোল্যান্ড! ইউক্রেনে রুশ হামলার পর আকাশে উড়ল যুদ্ধবিমান

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যাপক বিমান হামলার জেরে পোল্যান্ডে যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার ভোরে রাশিয়া এই হামলা চালায়, যা পোল্যান্ড সীমান্তের কাছাকাছি এলাকাকেও লক্ষ্য করে সংঘটিত হয়।

এর কয়েক ঘণ্টা আগে, ন্যাটো বাহিনী এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় রাশিয়ার তিনটি যুদ্ধবিমানকে প্রতিহত করে। খবর অনুযায়ী, ইউক্রেনে হামলার পাশাপাশি এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় ইউরোপজুড়ে উত্তেজনা বেড়েছে।

পোলিশ সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, “রাশিয়ার দূরপাল্লার বিমান বাহিনীর কার্যক্রমের কারণে, যারা ইউক্রেনের ভূখণ্ডে আঘাত হানছে, পোলিশ এবং মিত্র দেশগুলোর বিমান আমাদের আকাশ সীমায় টহল দিচ্ছে।

তারা আরও জানায়, “নিয়মিত টহল বিমান এবং ভূমি-ভিত্তিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া শনিবার ভোর রাতে ইউক্রেনের ওপর ৫৭৯টি আক্রমণাত্মক ড্রোন এবং বিভিন্ন ধরনের ভুয়া ড্রোন দিয়ে হামলা চালায়। এছাড়াও, তারা আটটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ৩২টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, “সারারাত ধরে ইউক্রেন রাশিয়ার ব্যাপক হামলার শিকার হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বোমা হামলায় তিনজন নিহত হয়েছে এবং বহু মানুষ আহত হয়েছে।

জেলেনস্কি আরও বলেন, “প্রতিটি হামলা সামরিক প্রয়োজন থেকে নয়, বরং বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি এবং আমাদের অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য রাশিয়ার ইচ্ছাকৃত কৌশল। এ কারণে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন।

আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ার হামলায় আটজন নিহত এবং অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছে।

শুক্রবার, ন্যাটো বাহিনী এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের দায়ে রাশিয়ার তিনটি মিগ-৩১ যুদ্ধবিমানকে প্রতিহত করে।

এস্তোনিয়া এই ঘটনাকে “নজিরবিহীনভাবে দুঃসাহসিক” বলে উল্লেখ করেছে।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, যুদ্ধবিমানগুলো ফিনল্যান্ড উপসাগরের ওপর দিয়ে এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করে ১২ মিনিট ধরে সেখানে অবস্থান করে।

ন্যাটো জানিয়েছে, ইতালীয় এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, যা ন্যাটোর ‘ইস্টার্ন সেন্ট্রি’ অপারেশনের অংশ হিসেবে এস্তোনিয়ায় মোতায়েন ছিল, এছাড়া সুইডিশ এবং ফিনিশ বিমানও অনুপ্রবেশের জবাব দেয়।

রাশিয়া অবশ্য তাদের বিমানের এস্তোনীয় আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

তারা জানায়, বিমানগুলো “আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনেই” এবং “অন্যান্য দেশের সীমান্ত লঙ্ঘন না করেই” ওড়াউড়ি করেছে।

এ ঘটনার পর এস্তোনিয়া ন্যাটো আর্টিকেল ৪-এর অধীনে আলোচনা চেয়ে আবেদন করেছে।

আর্টিকেল ৪-এর মাধ্যমে যে কোনো সদস্য ন্যাটো’র প্রধান রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থার কাছে কোনো বিষয় আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপন করতে পারে।

আগামী সপ্তাহের শুরুতে এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে, মাসের শুরুতে রাশিয়ার ড্রোন পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, যা ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে মিত্রদের উৎসাহিত করে।

একই মাসে, ন্যাটো যুদ্ধবিমান ইউক্রেনে হামলার সময় পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘন করা রাশিয়ার একাধিক ড্রোন ভূপাতিত করে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের পর এই প্রথম ন্যাটো গুলি চালিয়েছে।

ন্যাটো এই ঘটনাকে মস্কোর “সম্পূর্ণ বিপজ্জনক” আচরণ হিসেবে অভিহিত করেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *