যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে সম্প্রতি আতঙ্ক ছড়িয়েছে ‘সোয়াটিং’-এর নামে এক ধরনের প্রতারণামূলক ঘটনার কারণে। এর ফলে, কর্তৃপক্ষের কাছে আসা মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে জরুরি পরিষেবার কর্মীরা ছুটে গিয়েছেন, যা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তীব্র ভীতি তৈরি করেছে এবং শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করেছে।
তবে, এই ধরনের ঘটনাগুলো কেবল আমেরিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং সারা বিশ্বেই বাড়ছে ডিজিটাল প্রতারণা এবং ভুয়া তথ্যের বিস্তার।
সোয়াটিং আসলে কী? সোয়াটিং হলো এমন একটি কৌশল, যেখানে কেউ কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জরুরি পরিষেবাকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে পাঠায়। সাধারণত, এর মাধ্যমে কাউকে হয়রানি করা বা ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ফোন কলের মাধ্যমে জানানো হয় যে, সেখানে বন্দুকধারী হামলাকারী রয়েছে। এর পরেই দ্রুত পুলিশসহ জরুরি বিভাগের কর্মীরা ছুটে যান, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
এ বছর, দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ভুয়া হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে, অ্যারিজোনার নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি, পেনসিলভেনিয়ার ভিলানোভা ইউনিভার্সিটি এবং আরকানসাস ইউনিভার্সিটির ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
ঘটনার সময়, আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠী ও পরিবারের সদস্যদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছিল, যেন তারা সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে অবগত থাকতে পারে।
নর্দার্ন অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটিতে, এক ব্যক্তি নিজেকে ‘জ্যাকব’ পরিচয় দিয়ে ফোন করে জানায়, লাইব্রেরিতে একজন বন্দুকধারী ঘোরাঘুরি করছে। এরপর, গুলির শব্দ পাওয়া যায়, যা আসলে ছিল একটি কৌশল।
ভিলানোভা ইউনিভার্সিটিতে, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরিচিতিমূলক অনুষ্ঠানের সময় একটি সতর্কবার্তা আসে, যেখানে বলা হয়, ক্যাম্পাসে বন্দুকধারী রয়েছে। ঘটনার সময়, শিক্ষার্থীরা দ্রুত আশ্রয় নেয় এবং জরুরি বিভাগের কর্মীরা ছুটে আসে।
আরকানসাস ইউনিভার্সিটিতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে, তবে পরে জানা যায়, এটি একটি মিথ্যা খবর ছিল।
এই ধরনের ঘটনার মূল কারণ হলো, আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে ইন্টারনেট প্রোটোকল (ভিওআইপি) ব্যবহার করে ফোন কল ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে, অপরাধীরা সহজেই তাদের পরিচয় গোপন রাখতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধরনের ঘটনাগুলো কেবল একটি মজা নয়, বরং এটি হাজারো মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়ছে। কারণ, তারা সবসময় উদ্বেগের মধ্যে থাকে। এছাড়া, এই ধরনের ঘটনার ফলে জরুরি বিভাগের কর্মীদেরও মূল্যবান সময় নষ্ট হয়।
বাংলাদেশেও অনলাইনে ভুয়া তথ্য এবং গুজবের বিস্তার একটি উদ্বেগের বিষয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ার কারণে, যেকোনো ধরনের ভুয়া তথ্য দ্রুত মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে।
তাই, এই ধরনের ঘটনার মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধি, নির্ভরযোগ্য তথ্যের প্রচার এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন