যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি: গণতন্ত্র কি নতুন সংকটে?
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখন এক নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন – গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। দেশটির নীতিনির্ধারকদের কিছু পদক্ষেপ, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত, বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তাদের মতে, এর ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে কারণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, শীর্ষ অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানবিদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা খর্ব করারও অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, সরকারি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় অংশীদারিত্ব এবং মিডিয়া সংস্থাগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন ঘটনাগুলো উদ্বেগের কারণ। তাদের মতে, এগুলো কোনো তৃতীয় বিশ্বের দেশে নয়, বরং বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশটিতে ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের একজন গবেষক ভ্যানেসা উইলিয়ামসন সিএনএনকে জানান, “যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র নিয়ে আমি আগে কখনো এত উদ্বিগ্ন হইনি।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, গণতন্ত্র অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশি হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গণতন্ত্রের প্রসার ঘটলে দীর্ঘমেয়াদে মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন, গণতন্ত্রের ফলে মূলধন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বেশি বিনিয়োগ হয়।
অন্যদিকে, পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদী নেতারা ক্ষমতায় এলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে খারাপ ফল দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, জনতুষ্টিবাদী নেতারা ক্ষমতায় আসার ১৫ বছর পর জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গণমাধ্যম এবং মুক্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কমে গেলে তা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনামূলক খবর পরিবেশন করার কারণে মিডিয়া সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, যা নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকার কথা, তার স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে বরখাস্ত করার ঘটনাও ঘটেছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এসব ঘটনার পাশাপাশি, সরকার বিভিন্ন বেসরকারি ব্যবসায় হস্তক্ষেপ করছে, যা উদ্বেগের আরেকটি কারণ। উদাহরণস্বরূপ, প্রযুক্তি কোম্পানি ইন্টেলের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক এবং তাদের ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের এমন পদক্ষেপগুলো অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। অনেক ব্যবসায়ী নেতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন, কারণ তাঁরা মনে করেন এতে ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে, অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত সকলের উচিত গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন জানানো।
তথ্য সূত্র: সিএনএন