হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান: অপরাধীদের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করে কীভাবে অপরাধ প্রতিরোধ করা যায়।
অপরাধ জগত সবসময়ই মানুষের কাছে এক রহস্যময় বিষয়। মানুষ কেন খুন করে? তাদের মানসিকতা কেমন হয়? অপরাধীদের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করে এই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করেন কিছু বিশেষজ্ঞ, যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন এফবিআই-এর মহিলা প্রোফাইলারগণ। অপরাধবিষয়ক অনুসন্ধানে তাঁদের কাজ অপরাধীদের সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং ভবিষ্যতে অপরাধ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর বিহেভিওরাল সায়েন্স ইউনিট (Behavioral Science Unit) -এর কর্মীরা অপরাধীদের মানসিকতা বুঝতে গভীর অনুসন্ধান চালান। তাঁদের প্রধান কাজ হল, অপরাধের ধরন এবং অপরাধীর অতীত বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য কারণগুলো খুঁজে বের করা। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাঁরা অপরাধ প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।
ডাঃ অ্যান বার্গেস নামের এক মনোবিজ্ঞানী ছিলেন এই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি মেনেনডেজ ভাইদের মামলা নিয়ে কাজ করেছিলেন। এই দুই ভাই তাঁদের বাবা-মাকে হত্যা করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। বার্গেস তাঁদের সাথে কথা বলে তাঁদের মানসিক অবস্থা জানার চেষ্টা করেন এবং ঘটনার পেছনের কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। তিনি তাঁদের শৈশব এবং পারিবারিক সম্পর্কের উপর আলোকপাত করেন, যা তাঁদের অপরাধের কারণ হতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গোল্ডেন স্টেট কিলার-এর ঘটনাটিও প্রোফাইলিং-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এই সিরিয়াল কিলারের অপরাধগুলো বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের আচরণের মধ্যে মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়। অপরাধীরা কীভাবে তাঁদের শিকার নির্বাচন করে এবং অপরাধ করার আগে কী ধরনের আচরণ করে, সেগুলোর উপর ভিত্তি করে প্রোফাইলিং করা হয়। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে অপরাধীকে শনাক্ত করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
ফ্লোরিডার একটি বহুল আলোচিত ঘটনা হলো, ব্রায়ান কোহবার্গার নামক এক ব্যক্তির দ্বারা চারজন শিক্ষার্থীর হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনায় অপরাধীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে। মনোবিজ্ঞানীরা এই ধরনের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ব্রায়ান কোহবার্গারের মানসিকতা বিশ্লেষণ করছেন। তাঁদের মতে, অপরাধীর প্রতিটি পদক্ষেপ, তাঁর চিন্তা-ভাবনা এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে একই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বের করা যেতে পারে।
অপরাধ প্রোফাইলিং-এর মূল উদ্দেশ্য হলো, অপরাধীদের আচরণ বিশ্লেষণ করে তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা। এর মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের কারণগুলো বোঝা যায় এবং ভবিষ্যতে অপরাধ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়। প্রোফাইলিং কেবল অপরাধীকে সনাক্ত করতেই সাহায্য করে না, বরং সম্ভাব্য অপরাধীদের চিহ্নিত করতে এবং তাঁদের সহিংসতা প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই প্রক্রিয়ায়, অপরাধ সংঘটনের আগে কিছু সতর্কতামূলক লক্ষণ (pre-attack behaviors) চিহ্নিত করা হয়। যেমন, কোনো ব্যক্তির অস্বাভাবিক আচরণ, প্রতিশোধের প্রবণতা অথবা অনলাইনে সহিংসতার হুমকি ইত্যাদি। এই ধরনের আচরণগুলো বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অপরাধ প্রোফাইলিং একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি কেবল অপরাধীদের দোষারোপ করার জন্য নয়, বরং তাঁদের সম্পর্কে জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, কেন একজন ব্যক্তি অপরাধ করে এবং কিভাবে সেই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা যায়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন