হিমালয়ের পাদদেশে আতশবাজির প্রদর্শনী: পরিবেশ বিতর্কে আর্কেট্রিক্সের ক্ষমা প্রার্থনা।
চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ৫,৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত একটি স্থানে বিশাল আকারের আতশবাজির প্রদর্শনী আয়োজন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বহুজাতিক আউটডোর পোশাক প্রস্তুতকারক কোম্পানি আর্কেট্রিক্স।
চীনা শিল্পী কাই গুও-কিয়াংয়ের সঙ্গে মিলে ‘রাইজিং ড্রাগন’ নামে এই আতশবাজির প্রদর্শনী করা হয়, যা পরিবেশের উপর সম্ভাব্য প্রভাবের কারণে সমালোচনার শিকার হয়েছে।
শুক্রবার অনুষ্ঠিত হওয়া এই প্রদর্শনীতে রঙিন আলোয় সজ্জিত হয়ে পাহাড়ের চূড়া থেকে আকাশে উঠে আসে আতশবাজি।
চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পরেই পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কায় নেটিজেনরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তারা এই ধরনের আয়োজনকে একটি “সংবেদনশীল” এবং “অবিবেচনাপূর্ণ” পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর শিগাৎসের স্থানীয় সরকার রবিবার এই ঘটনার তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য একটি বিশেষ দলও গঠন করা হয়েছে।
চীনের জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম উইবোতে এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর ৯২ মিলিয়নের বেশি মানুষ পোস্টগুলো দেখেছেন।
আর্কেট্রিক্স, যারা মূলত কানাডীয় কোম্পানি এবং বর্তমানে চীনা মালিকানাধীন, সোমবার তাদের উইবো ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ক্ষমা চেয়েছে।
তারা জানায়, পরিবেশের প্রতি তাদের যে অঙ্গীকার, এই ঘটনা তার পরিপন্থী।
ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলেও তারা আশ্বাস দিয়েছে।
আর্কেট্রিক্স আরও জানিয়েছে, তারা একটি স্বাধীন পরিবেশ বিষয়ক সংস্থাকে দিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
অন্যদিকে, শিল্পী কাই গুও-কিয়াংও তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন।
তিনি জানান, ভবিষ্যতে পরিবেশের উপর আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তবে, ক্ষমা চাওয়ার পরেও বিতর্ক থামেনি।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস আর্কেট্রিক্সের ক্ষমা প্রার্থনার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তারা উল্লেখ করেছে, ইনস্টাগ্রামে আর্কেট্রিক্স তাদের চীনা দলের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও, পরিবেশগত মূল্যায়ন করার জন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের কথা উল্লেখ করেনি।
অনেক ব্যবহারকারী আর্কেট্রিক্সের এই পদক্ষেপকে “দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা” হিসেবেও দেখছেন।
উইবো ব্যবহারকারীদের মধ্যে কেউ কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি করেছেন।
এই ঘটনা হিমালয়ের মতো একটি অতি-সংবেদনশীল অঞ্চলে পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব নতুন করে তুলে ধরেছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, উন্নয়ন এবং বিনোদনের নামে প্রকৃতির ক্ষতি করা উচিত নয়।
এই ধরনের ঘটনা পরিবেশ সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলোর দায়িত্বের বিষয়টি আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন