গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান গণহত্যার শামিল, এমন অভিযোগ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। জাতিসংঘের একটি সংস্থার নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরা পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তবে ইসরায়েল শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
তাদের দাবি, তারা আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। গাজায় মানবিক বিপর্যয় বাড়ছে, যেখানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং বিশাল এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গাজার বৃহত্তম শহরে ইসরায়েলি অভিযান নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।
গণহত্যার অভিযোগ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি নিধনযজ্ঞের পর ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল।
এখন তাদের বিরুদ্ধেই গণহত্যার অভিযোগ উঠছে। ইসরায়েলের নেতারা একে ‘ফাঁকা আওয়াজ’ এবং ‘ইহুদি বিদ্বেষ’ হিসেবে বর্ণনা করছেন।
তাদের যুক্তি, হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলাও ছিল গণহত্যার শামিল। হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল, যাতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়।
নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রতিবেদনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছেন। তারা বলছেন, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার চেষ্টা করছে ইসরায়েল।
তাদের এই সিদ্ধান্তের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজার ওপর ইসরায়েলের অবরোধ, ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও আহত করা এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা।
যদিও ইসরায়েলের দাবি, হামাস এসব স্থানকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে।
গণহত্যার সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো জাতিগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করা হলে, তাকে গণহত্যা বলা হয়।
এর মধ্যে হত্যা, শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা এবং জীবনযাত্রার এমন পরিস্থিতি তৈরি করা, যা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়—এসব অন্তর্ভুক্ত।
অনেক বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার সংস্থা গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির হলোকস্ট এবং গণহত্যা বিষয়ক অধ্যাপক ওমর বারটোভও শুরুতে ইসরায়েলের পদক্ষেপকে গণহত্যা বলতে রাজি ছিলেন না।
কিন্তু রাফায় ইসরায়েলের অভিযান চালানোর পর তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেন।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা আত্মরক্ষা নয়, এমনকি আক্রমণও নয়—এটা একটি অসহায় জাতির নির্মূল।’
তবে, এই অভিযোগের সঙ্গে অনেকেই একমত নন। ইসরায়েল মনে করে, এই ধরনের অভিযোগ তাদের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
তাদের দাবি, হামাস আত্মসমর্পণ না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসসহ অনেকে মনে করেন, রাজনীতিবিদ বা পণ্ডিতদের এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে। এই মামলার চূড়ান্ত রায় আসতে কয়েক বছর লাগতে পারে।
তবে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত করার কথা ভাবছে এবং সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনে তাদের বয়কট করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস