উত্তরাধিকার: আপনার মৃত্যুর পর আপনার অর্থ কীভাবে বিতরিত হবে, জেনে নিন!

উত্তরাধিকার পরিকল্পনা: আপনার সঞ্চয়ের নমিনেশন এবং উইলের মধ্যেকার সম্পর্ক।

প্রত্যেক মানুষের জীবনে সঞ্চয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ করে থাকি, যেমন – ফিক্সড ডিপোজিট (Fixed Deposit), সঞ্চয়পত্র, জীবন বীমা এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড (Provident Fund)।

এই সঞ্চয়গুলি কাদের হাতে যাবে, তা নির্ধারণ করাটাও জরুরি। অনেকেই হয়তো একটি উইল (Oshiyot or Will) তৈরি করেন, যেখানে তারা তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, উইলের বাইরেও কিছু বিষয় আপনার ইচ্ছাকে প্রভাবিত করতে পারে।

আসলে, আপনি যদি কোনো আর্থিক অ্যাকাউন্টে যেমন – জীবন বীমা, ব্যাংক হিসাব, বা সঞ্চয়পত্রে কাউকে নমিনি (Nominee) করে থাকেন, তাহলে সেই নমিনিই আপনার মৃত্যুর পর সরাসরি সেই অর্থের অধিকারী হবেন, তা আপনার উইলে যা কিছুই লেখা থাকুক না কেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, নমিনেশন, উইলের চেয়েও শক্তিশালী হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি একটি জীবন বীমা পলিসিতে আপনার স্ত্রীর পরিবর্তে অন্য কাউকে নমিনি করেন, তাহলে আপনার উইল যাই বলুক না কেন, বীমার অর্থ সেই নমিনিই পাবেন। তাই, আর্থিক অ্যাকাউন্টগুলোতে নমিনেশন দেওয়ার সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে।

নমিনেশন দেওয়ার সুবিধা:

  • উত্তরাধিকার প্রক্রিয়া সহজ হয়: নমিনি থাকলে, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতা কমে আসে এবং দ্রুততার সঙ্গে অর্থ হস্তান্তর করা যায়।
  • আদালতের ঝামেলা এড়িয়ে চলা যায়: উইলের মাধ্যমে উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। নমিনি থাকলে এই প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।

নমিনেশন দেওয়ার সময় মনে রাখার বিষয়:

  • নমিনেশন আপ-টু-ডেট রাখা: জীবনের পরিবর্তন, যেমন- বিবাহবিচ্ছেদ, অথবা নমিনির মৃত্যু হলে, সেই অনুযায়ী নমিনেশন পরিবর্তন করা জরুরি। ধরুন, আপনি আপনার প্রাক্তন স্ত্রীকে নমিনি করে রেখেছেন, কিন্তু পরবর্তীতে বিয়ে করেছেন। এক্ষেত্রে, দ্রুত নমিনেশন পরিবর্তন করা উচিত।
  • নমিনির বিকল্প নির্বাচন: নমিনি যদি আপনার আগে মারা যান, তাহলে সেই ক্ষেত্রে কে আপনার সম্পদ পাবে, তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখা ভালো। আপনি আপনার নমিনির সন্তানদের, অথবা অন্য কোনো আত্মীয়কে নির্বাচন করতে পারেন।
  • ট্রাস্টের ব্যবহার: আপনি যদি আপনার নাবালক সন্তান বা এমন কাউকে উত্তরাধিকারী করতে চান যিনি অর্থের সঠিক ব্যবহার করতে পারবেন না, তাহলে ট্রাস্ট (Trust)-এর মাধ্যমে সম্পদ বিতরণ করা একটি ভালো উপায়। ট্রাস্টের মাধ্যমে, আপনি আপনার সম্পদ কিভাবে, কখন এবং কাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দিতে পারেন।

উত্তরাধিকার আইন:

বাংলাদেশে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো মুসলিম আইন (যদি আপনি মুসলিম হন), হিন্দু উত্তরাধিকার আইন (যদি আপনি হিন্দু হন), বা অন্যান্য প্রচলিত আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। যদি কোনো উইল না থাকে, তাহলে এই আইন অনুযায়ী আপনার সম্পদ বিতরণ করা হবে।

উপসংহার:

সঞ্চয় এবং উত্তরাধিকার পরিকল্পনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার সঞ্চয়ের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য, আর্থিক অ্যাকাউন্টগুলোতে নমিনেশন দেওয়া এবং সময়মতো তা আপডেট করা জরুরি। এছাড়াও, একটি সুস্পষ্ট উইল তৈরি করা উচিত, যেখানে আপনার সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ এবং উত্তরাধিকারীদের নাম উল্লেখ করা হবে। আপনার পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে, একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী এবং আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *