ডোনাল্ড ট্রাম্প: জাতিসংঘে এক সময়ের উপহাস, এখন বিশ্বনেতাদের কাছে গুরুত্ব বাড়ছে।
এক সময় জাতিসংঘের মঞ্চে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তৃতায় হাসির রোল উঠত। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই দৃশ্যপট এখন প্রায় অচিন্তনীয়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক সময় যিনি ছিলেন সমালোচিত, বিশ্ব নেতারা এখন তার সুনজর পেতে মরিয়া। মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে (ইউএনজিএ) যোগ দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প, যেখানে বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন তিনি।
সাত বছর আগের সেই দৃশ্যের কথা এখন কল্পনা করাও কঠিন। এক সময় বিদেশি কূটনীতিকদের উপহাসের পাত্র হওয়া ট্রাম্প এখন এমন এক বিশ্বের প্রতিভূ, যেখানে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব কমে আসছে।
বহু বিষয় নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকলেও, বর্তমানে অনেক দেশের সরকার প্রধানই তার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।
ট্রাম্পের নীতি-কৌশলের ভালো-মন্দ এখনো আলোচনার বিষয়। তিনি গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও, সেই সংঘাত এখনো চলছে।
ইসরায়েল ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে ফায়দা তোলার চেষ্টা করলেও, তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। মঙ্গলবার জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং অন্যান্য বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ মীমাংসায় ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করা হয়। এছাড়াও, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনাতেও তিনি মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন।
ট্রাম্প মনে করেন, অতীতের ব্যর্থতা সত্ত্বেও, তার প্রচেষ্টা নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য। কারণ, তার মতে, তিনি এমন কিছু করতে পেরেছেন, যা আগে জাতিসংঘের মাধ্যমেও সম্ভব হয়নি।
মঙ্গলবার সকালে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প অভিবাসন ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যুতে তার সাফল্যের কথা তুলে ধরবেন। একই সঙ্গে, তিনি জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলবেন।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সোমবার জানিয়েছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে আমেরিকার শক্তি বৃদ্ধির কথা তুলে ধরবেন। এছাড়াও, তিনি তার আট মাসের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো তুলে ধরবেন, যার মধ্যে সাতটি যুদ্ধ ও সংঘাতের অবসান অন্যতম।
তিনি বিশ্ব ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দুর্বলতা নিয়েও কথা বলবেন এবং বিশ্বের জন্য তার সুস্পষ্ট ও গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন।
জাতিসংঘের প্রতি ট্রাম্পের মনোভাব সবসময়ই কিছুটা সমালোচনামূলক ছিল। এমনকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই তিনি জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
তিনি মনে করতেন, জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ের মার্বেলগুলো “সস্তা”।
ক্ষমতায় দ্বিতীয় মেয়াদে আসার পর ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে তার প্রভাব বিস্তার করেছেন। জাতিসংঘের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মানবিক সহায়তা ও শান্তিরক্ষা মিশনেও অর্থ কমিয়ে দেওয়ায় জাতিসংঘের ওপর আর্থিক চাপ বেড়েছে।
ট্রাম্প একবার বলেছিলেন, “আমার সবসময় মনে হয়েছে জাতিসংঘের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সেই সম্ভাবনা অনুযায়ী তারা কাজ করছে না।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ইউনেস্কো এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনা হয়েছে।
ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল, এই সংস্থাগুলো “রাজনৈতিক উদ্দেশ্য” নিয়ে কাজ করে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা মিত্রদের থেকে ভিন্ন দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা নিয়েও ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।
ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগে একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্মেলন হতে যাচ্ছে, যেখানে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ১৫০টি দেশের সমর্থন রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না।
মঙ্গলবার ট্রাম্প গাজা সংঘাত নিয়ে আলোচনার জন্য কাতার, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে, জাতিসংঘ ইসরায়েলের প্রতি বৈরী আচরণ করে।
তারা জাতিসংঘের দুর্বলতা এবং আর্থিক অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলোও তুলে ধরেন।
ট্রাম্পের জাতিসংঘের প্রতি গুরুত্বের বিষয়টি বোঝাতে, তিনি আট মাস পর্যন্ত জাতিসংঘে কোনো রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেননি।
সম্প্রতি মাইক ওয়াল্টজকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই বৈঠকের ফাঁকে ট্রাম্প ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন der Leyen এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জ্যাভিয়ের মিয়েলির সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
এছাড়াও, ট্রাম্প জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন, যা সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টদের জাতিসংঘের বার্ষিক সম্মেলনে একটি নিয়মিত ঘটনা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন